আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের চমন-ই হজরি এলাকায় চারটি কার্পেট নিয়ে এসেছেন শুকরুল্লাহ।
উদ্দেশ্য, একসময় শখের বশে কেনা কার্পেটগুলো বিক্রি করবেন তিনি। কারণ পরিবারের ভরণ-পোষণ চালানোর মতো নগদ অর্থ তার হাতে নেই।
শুধু শুকরুল্লাহ নন, তার মতো শত শত আফগান ফ্রিজ, কুশন, ফ্যান, বালিশ, কম্বল, রূপার বাসনকোসন, পর্দা, খাট, মেট্রেস, রান্নার বাসনপত্রসহ হরেক রকমের জিনিসপত্র বেচতে চমন-ই হজরিতে ভিড় করেছেন।
শুকরুল্লাহর মতো এই আফগানদের কাছেও নগদ অর্থ নেই। তাই ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি শখের জিনিসও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
শুকরুল্লাহ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এই চারটি কার্পেট ৪৮ হাজার আফগানি দিয়ে কিনেছিলাম। এখন এসব বিক্রি করে পাঁচ হাজারের বেশি আফগানি পাব না।’
১৫ আগস্ট কাবুল পতনের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবানের দখলে যায়।
এর পরই কয়েক সপ্তাহ আগে আন্তর্জাতিক তহবিলে আফগানিস্তানের প্রবেশাধিকার স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আফগানিস্তানজুড়ে বিভিন্ন ব্যাংক ১৫ আগস্টের পরপরই বন্ধ হয়ে যায়। অনেক এটিএম বুথ কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
এতে নগদ অর্থের চরম সংকটে পড়েন আফগানরা।
সম্প্রতি আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি ব্যাংক ফের খুললেও সাপ্তাহিক অর্থ তোলার পরিমাণ ২০ হাজার আফগানির মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
নগদ অর্থ তোলার আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাংকের সামনে প্রতিদিন ভিড় করছেন আফগানিস্তানের শত শত নারী-পুরুষ।
শুকরুল্লাহ বলেন, ‘এ মুহূর্তে চাল, তেল ও ময়দা কেনার মতো অর্থ আমার দরকার।’
তিনি জানান, গত এক বছরে তার পরিবারের ৩৩ সদস্য একটি ঘরে বাস করতে শুরু করেছেন।
কাবুল পতনের দিন সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে পালানোর আগে থেকেই মুমূর্ষু অর্থনীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান।
করোনাভাইরাস মহামারি ও প্রলম্বিত খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষিনির্ভর আফগানিস্তানের অর্থনীতির দশা আরও বিপর্যস্ত করে তোলে।
গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানের ৯৭ শতাংশেরও বেশি জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
আফগানিস্তানের চলমান সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে দেশটিকে সহায়তায় সোমবার ৬০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের চেষ্টায় জেনেভায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন জাতিসংঘের প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেস।