২০ বছর আগে আজকের দিনটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পাল্টে দেয় পুরো বিশ্বকে। এদিনের পর যুদ্ধ, ক্ষমতা বদল, সহিংসতা রক্তাক্ত করে জনপদের পর জনপদ।
করোনাভাইরাস মহামারি এবং সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে নাগরিক ও সেনা প্রত্যাহারের দুঃসহ পরিস্থিতি দেখার পর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের নির্মম সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর পালন করছে যুক্তরাষ্ট্রের আমজনতা।
যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর মূল হোতা আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে। নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে যেখানে হামলা চালানো হয়, সেখানে সুদৃশ্য নতুন বহুতল ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে।
দুই সপ্তাহের কম সময় আগে কাবুল বিমানবন্দর ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ সেনা। এর মাধ্যমে শেষ হয় তথাকথিত ‘চিরকালীন যুদ্ধের’।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, টানা ২০ বছরের যুদ্ধের ফল কী? সন্ত্রাসবাদ কি থেমেছে? ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলকারীদের আশ্রয় দেয়া তালেবানই গত মাসে দুই দশক পর ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসেছে।
৯/১১-এর মাস্টারমাইন্ড অভিযুক্ত খালিদ শেখ মোহাম্মদসহ আরও পাঁচজন বিচারের অপেক্ষায় গুয়ানতামো বে কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন।
১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলায় বাবা হারানো থিয়া ত্রিনিদাদ এপিকে বলেন, ‘২০ বছর পর আমরা অন্য একটি বিশ্ব দেখার আশা করেছিলাম, কিন্তু তা হয়নি।
‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি মেনে নেয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এখন অনেক ভাগে বিভক্ত। আগের সময়ে যদি ফেরা যেত।’
হামলা চালানো নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, ভার্জিনিয়ার পেন্টাগন ও পেনসিলভানিয়ার শ্যাঙ্কসভিলে যাওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের।
শুক্রবার রাতে বাইডেন বলেছিলেন, ‘হামলার পর মা-বাবা ছাড়া সন্তানরা বড় হয়েছে, সন্তান ছাড়া মা-বাবারা গত ২০ বছর সময় পার করেছেন।
‘৯/১১ আমাদের এই শিক্ষাই দেয়, ঐক্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।’
ছিনতাই করা বিমানকে ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আল-কায়েদার ১৯ সন্ত্রাসী। হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের চারটি জায়গায়। প্রাণ হারান প্রায় তিন হাজার বেসামরিক নাগরিক। রচিত হয় ত্রাসের অধ্যায়।
সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার হয়। বাড়ানো হয় রাষ্ট্রীয় নজরদারি।
কোনো ধরনের বিস্ফোরণ বা সহিংস কর্মকাণ্ড দেখলেই আতঙ্কিত মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, ‘সন্ত্রাসী হামলা ছিল কি?’
৯/১১-এর পর মতাদর্শগত সহিংসতা বা চক্রান্ত বন্ধ হয়নি। তবে বাইরের সন্ত্রাসী হামলার চেয়ে বেড়েছে দেশের চরমপন্থিদের উত্থান, যা উদ্বেগে ফেলেছে সরকারপ্রধানদের।
টুইট টাওয়ারসহ চারটি স্থাপনায় আল-কায়েদার হামলার পর বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের সন্দেহের চোখে দেখা হয়। তাদের ওপর বেড়েছে নজরদারি। প্রায়ই বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্য বা অপরাধের শিকার হন তারা।
২০০১ সালে হামলার পর ইসলামি চরমপন্থিদের শায়েস্তা করতে ‘ওয়ার অন টেরর’ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। হামলা হয় আফগানিস্তান ও ইরাকে।
গত মাসে ২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে বিদেশি ও আফগান নাগরিক প্রত্যাহারের শেষ সময়ে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয় যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ সেনা। এ ছাড়া নিহত হয় আরও ১৬৯ বেসামরিক আফগান।
নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হামলার দায় স্বীকার করে।
যুক্তরাষ্ট্রের শঙ্কা, ৯/১১-এ হামলা চালানো আল-কায়েদা ফের আফগানিস্তানে শক্তিশালী হতে পারে।
৯/১১-এর পর বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ হবে বলে আশা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্নেল ম্যালকম ব্রুস ওয়েস্টকোট।
তবে আশা পূরণ না হওয়ার পাশাপাশি অব্যাহত সন্ত্রাসী হুমকিতে থাকা বৈশ্বিক পরিস্থিতি দেখে ওয়েস্টকোর্ট দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, আমার প্রজন্ম সন্ত্রাসী নির্মূল করতে সমর্থ হবে।
‘পরের প্রজন্মকে এ নিয়ে আর ভাবতে হবে না; কিন্তু আদতে তা হয়নি।’