আফগানিস্তানে চলমান শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে তালেবানের ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।
একই সঙ্গে বিক্ষোভ চলাকালে তালেবানের গুলিতে বেশ কয়েকজন আফগান নিহত হওয়ার ঘটনারও নিন্দা জানায় আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
জাতিসংঘ শুক্রবার আফগান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি তালেবানের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায় বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র রবিনা শমদাসানি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ-সমাবেশ করা নাগরিক অধিকার। সেই বিক্ষোভের প্রতিবেদন তৈরি করাও সাংবাদিকদের কাজ।
‘বিক্ষোভকারী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার পাশাপাশি তাদের গ্রেপ্তারের তৎপরতা তালেবানকে অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানাই আমরা।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছুড়ছে তালেবানের সশস্ত্র যোদ্ধারা। পাশাপাশি তাদের চাবুক দিয়েও মারা হচ্ছে।’
১৫ আগস্ট কাবুল পতনের পর তালেবানের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত বিক্ষোভে কমপক্ষে চারজন প্রাণ হারিয়েছে। নব্বইয়ের দশকের কঠোর নিপীড়নমূলক শাসনের পুনরাবৃত্তি না করে এবার তুলনামূলকভাবে নমনীয় অবস্থানের অঙ্গীকার করেছিল তালেবান।
তবে এরই মধ্যে বিরোধী মতাবলম্বীদের বরদাস্ত না করার বার্তা বিভিন্নভাবে দিচ্ছে কট্টরপন্থি সংগঠনটি।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে হেরাতসহ আফগানিস্তানের বিভিন্ন শহরে শত শত বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছোড়ে তালেবান। এতে সে সময় দুজনের মৃত্যু হয়।
শমদাসানি জানান, গত মাসে আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের ছত্রভঙ্গ করার সময়ে এক শিশুসহ দুজনকে তালেবানের গুলি করে হত্যা করার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন জাতিসংঘের হাতে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা বিক্ষোভের সময় আগ্নেয়াস্ত্র কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয়।’
কাবুলের রাস্তায় নারীদের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
চলতি সপ্তাহে বিক্ষোভ চলাকালে বেশ কয়েকজন নারী ও ১৫ সাংবাদিককে তালেবানের পেটানো ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও উল্লেখ করেন শমদাসানি।
বুধবার নারী বিক্ষোভের প্রতিবেদন তৈরির সময় কমপক্ষে পাঁচ সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে তালেবান। তাদের মধ্যে দুজনকে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্মমভাবে পেটানো হয়।
জাতিসংঘের কর্মকর্তা শমদাসানি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমকে এক সাংবাদিক বলেছেন, তালেবান তার মাথায় লাথি মারে।
“কেন মারা হচ্ছে, জানতে চাইলে তালেবানের এক সদস্য ওই সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘তোমাকে শিরশ্ছেদ করা হচ্ছে না, এটা তোমার ভাগ্য।’”
তিনি বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের আফগানিস্তানে চাপে রাখা হচ্ছে। তালেবান তাদের হুমকি দিচ্ছে।’
বুধবার রাতে বিচার মন্ত্রণালয় অনুমতি না দিলে যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ বেআইনি হিসেবে দেখা হবে বলে ঘোষণা দেয় তালেবান।
শমদাসানি জানান, পরের দিন বৃহস্পতিবার রাজধানী কাবুলের কয়েকটি এলাকায় মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করতে টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিকে নির্দেশ দেয় তালেবান।