মুখ্যমন্ত্রিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে এবার ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা। সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী তাকে ছয় মাসের মধ্যে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভবানীপুরের আসনটিতে হারলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতে পারবেন না মমতা। তাই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে এখন এই আসনের উপনির্বাচন।
শুক্রবার মনোনয়নপত্র জমা দিতে বেলা ২টার দিকে কালীঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আলিপুর সার্ভে বিল্ডিংয়ে পৌঁছান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোভিড বিধি মেনেই তিনি সেখানে যান। সঙ্গে ছিলেন তার মুখ্য নির্বাচনি এজেন্ট বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, চলচ্চিত্র প্রযোজক নিসপাল সিং রানে এবং ফিরহাদ হাকিমের স্ত্রী ইসমত হাকিম।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে সই করেন অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিকের স্বামী চলচ্চিত্র প্রযোজক নিসপাল সিং রানে এবং পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের স্ত্রী ইসমত হাকিম।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রার্থী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন মমতা। এই নিয়ে তিনবার ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হচ্ছেন তিনি। ২০১১ সালেও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যা হয়েছে, তার বদলা নিতে মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছেন। ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। এখানে কেউ নাক গলাতে পারবেন না।’
নির্বাচন কমিশন ভবানীপুরে উপনির্বাচনের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে দেয়াল লিখন ও কর্মিসভা শুরু করে দিয়েছিল। ভবানীপুর কেন্দ্রকে আটটি ওয়ার্ডে ভাগ করে সুব্রত বক্সী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্রের মতো নেতাদের প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
বিজেপিও ইতিমধ্যে তাদের প্রচার পরিকল্পনা তৈরি করে মুখোমুখি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘বিজেপিকে ভয় পাচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি। ভয় পাচ্ছেন বলে পুরো মন্ত্রিসভাকে প্রচারে নামিয়ে দিয়েছেন ভবানীপুরে। তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। আমরা তো এখনও ময়দানে নামিনি।’
ভবানীপুরে বহু অবাঙালি মানুষের বাস। সে কথা মাথায় রেখে তৃণমূল নেত্রী গণেশ চতুর্থীর দিনেই মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। একইভাবে বিজেপিও ভবানীপুর উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে শুক্রবার প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের নাম ঘোষণা করেছে।
প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল রাজ্যে ভোটপরবর্তী সহিংসতা মামলায় বিজেপির প্রধান আইনজীবী হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে লড়াই করেছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে এন্টালি কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।
প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে তীব্র আক্রমণ করে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘প্রিয়াঙ্কার কোনো জনভিত্তি নেই। তিনি কখনও পুরসভা বা পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।’
অন্যদিকে কংগ্রেস, ভারতের ২০২৪ লোকসভা ভোটে বিজেপিবিরোধী জোটের লক্ষ্যে ভবানীপুর উপনির্বাচনে মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিপিএম ভবানীপুর উপনির্বাচনে আইনজীবী শ্রীজীব বিশ্বাসকে তাদের প্রার্থী করেছে।
ফলে সহজেই অনুমেয় মুখোমুখি লড়াই হবে তৃণমূল ও বিজেপির। ৩০ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণ। ৩ অক্টোবর ভোট গণনা এবং ফল ঘোষণা।