আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান, গত চার সপ্তাহে কাজে সেসবের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
সবশেষ কথার উল্টো কাজ হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের কিছু সাবেক কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে তালেবান।
আফগান সংবাদ সংস্থা টোলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়, যেসব সাবেক সরকারি কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, মূলত তাদেরই ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
তালেবানের সংস্কৃতিবিষয়ক কমিশনের সদস্য এনামুল্লাহ সামানগনি বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করলেও ওই কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করেননি।
গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফিরে এসে কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিল তালেবান। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের কর্মীদের প্রতিহিংসার শিকার হতে হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছিল গোষ্ঠীটি।
আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিএবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক চিঠিতে জানিয়েছে, কয়েকজন মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, গভর্নর, উপ-গভর্নর, পার্লামেন্ট সদস্য, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, মেয়র ও অন্যান্য বিশেষ কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা উচিত।
এর আগে ১৭ আগস্টের সংবাদ সম্মেলনে শরিয়াহ আইন অনুযায়ী নারীদের অধিকার রক্ষা, মানবাধিকার নিশ্চিত ও সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল তালেবান।
তালেবান আশ্বাস কতটা রক্ষা করবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই সন্দিহান আফগান নারীরা। কট্টরপন্থি ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠী তালেবানের দৃষ্টিতে শরিয়াহ আইনে নারীদের অধিকারের সংজ্ঞা এখনও অস্পষ্ট।
নব্বইয়ের দশকে প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালীন শিক্ষা গ্রহণ, জীবিকা উপার্জনসহ নারীদের সব ধরনের মৌলিক অধিকার নিষিদ্ধ করেছিল তালেবান। এবারও অনেক জায়গায় তালেবান যোদ্ধারা নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে ও প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
শুরুতে নতুন তালেবান সরকারে নারীদের অংশ নেয়ার সুযোগের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে ঘোষিত অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভা বা সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন নারীরও নাম নেই।
নারীদের চাকরি করতে দেয়া হবে বলেও পরে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে তালেবান। বুধবার কাবুলে অধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
তালেবানের প্রাথমিক ঘোষণায় নারীদের বোরকা পরা নিয়ে বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করা না হলেও পরে তাদের আপাদমস্তক ঢাকা আবায়া পরার নির্দেশ দেয়া হয়। বলা হয়, বাইরে বের হতে হলে চোখ ছাড়া দেহের আর কোনো অংশ দেখা যায়, এমন পোশাক পরতে পারবেন না নারীরা।
এ ছাড়া সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পেটানো ও বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির অভিযোগও উঠেছে তালেবান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে দেয়া আশ্বাস পূরণের আশাও ম্লান। এরই মধ্যে আফগানিস্তানের নতুন শাসক দল তালেবানের হেফাজতে বেধড়ক মারপিট, বেত্রাঘাত ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।
কাবুলে ইতিলাৎরোজ সংবাদপত্রের দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনের ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সংবাদকর্মীদের আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন সিপিজে জানিয়েছে, গত দুই দিনে কমপক্ষে ১৪ জন সাংবাদিককে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে তালেবান।
সিপিজের এশিয়া অঞ্চলের সমন্বয়ক বলেন, ‘তালেবান খুব অল্প সময়েই প্রমাণ করেছে যে, আফগানিস্তানে স্বাধীন গণমাধ্যম নিশ্চিতের যে প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছিল, সেগুলো কথার কথা ছিল। সংবাদকর্মীদের নিরাপদে ও মুক্তভাবে খবর সংগ্রহের আশ্বাস অর্থহীন ছিল।’