বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ভাগ্য ভালো যে মাথা কাটছি না’

  •    
  • ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১০:৩০

সংবাদকর্মীদের আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন সিপিজে জানিয়েছে, গত দুই দিনে কমপক্ষে ১৪ সাংবাদিককে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে তালেবান। খুব অল্প সময়েই তারা প্রমাণ করেছে যে, আফগানিস্তানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি স্রেফ কথার কথা ছিল।

আফগানিস্তানের নতুন শাসক দল তালেবানের হেফাজতে বেধড়ক মারপিট, বেত্রাঘাত ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।

কাবুলে তালেবানবিরোধী আন্দোলনের খবর সংগ্রহের সময় আটক করা হয় তাদের।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে নিমাতুল্লাহ নাকদি নামের এক সাংবাদিক বলেন, ‘এক তালেবান সদস্য তার পা দিয়ে আমার মাথা চেপে রেখেছিল, দেয়ালে আমার মুখ ঠুকরে দিচ্ছিল। আমার মাথায় লাথি মেরেছে…আমি ভেবেছিলাম আমাকে মেরেই ফেলবে ওরা।’

নাকদি জানান, সে সময় মারার কারণ জানতে চাইলে তালেবান সদস্যদের জবাব ছিল, ‘কপাল ভালো যে শুধু পেটাচ্ছি, মাথা কেটে ফেলিনি এখনও।’

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাবুলে ইতিলাৎরোজ সংবাদপত্রের দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনের নির্মম ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গ্রেপ্তারকৃতদের অন্যজন তাকি দারিয়াবি জানান, একটি থানায় নির্যাতনের শিকার হন তিনি।

নাকদি ও দারিয়াবি গত বুধবার রাজধানীতে তালেবানের বিরুদ্ধে নারীদের বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। সেদিন বিবিসির একটি দলকেও খবর সংগ্রহে ও ছবি-ভিডিও ধারণে তালেবান বাধা দেয় বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।

তারা জানান, একটি থানায় নিয়ে তাদের লাঠি, বিদ্যুতের তার আর চাবুক দিয়ে পেটানো হয়। কয়েক ঘণ্টা পর কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হয়।

নাকদি বলেন, ‘তারা আমাকে আলাদা একটা কক্ষে রেখে হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়। আমি কোনো বাধা দেব না ঠিক করে নিয়েছিলাম আগেই। কারণ আমি ভেবেছিলাম যে বাধা দিলে হয়তো তারা আমাকে পিটিয়ে মেরেই ফেলবে। দেহের সামনের অংশে আঘাত লাগতে না দিতে মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছিলাম।

‘আট তালেবান সদস্য মিলে আমাকে পিটিয়েছিল…হাতের সামনে যা পাচ্ছিল, তা দিয়েই পেটাচ্ছিল। আমার মুখের আঘাতগুলো তাদের জুতার দাগ। আমার মুখে লাথি মারছিল তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি অচেতন হয়ে গেলে তারা মার দেয়া বন্ধ করে। এরপর আরেকটি ভবনে নিয়ে গিয়ে একটি কারাকক্ষে আটকে রেখে চলে যায়।’

দারিয়াবিও মার খেয়ে অচেতন হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের দ্রুত হেঁটে বেরিয়ে যেতে বলেছিল। কিন্তু ব্যথার চোটে আমি হাঁটতেই পারছিলাম না।’

নাকদির ক্যামেরা তালেবান যোদ্ধারা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল বলেও জানান তিনি। ওই ক্যামেরা দিয়েই বিক্ষোভের ছবি তুলছিলেন তিনি।

আফগানিস্তানের টোলো নিউজ এজেন্সির এক ক্যামেরাম্যানকেও তালেবান গ্রেপ্তারের পর প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।

সংবাদকর্মীদের আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন সিপিজে জানিয়েছে, গত দুই দিনে কমপক্ষে ১৪ জন সাংবাদিককে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে তালেবান।

সিপিজের এশিয়া অঞ্চলের সমন্বয়ক বলেন, ‘তালেবান খুব অল্প সময়েই প্রমাণ করেছে যে, আফগানিস্তানে স্বাধীন গণমাধ্যম নিশ্চিতের যে প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছিল, সেগুলো কথার কথা ছিল। সংবাদকর্মীদের নিরাপদে ও মুক্তভাবে খবর সংগ্রহের আশ্বাস অর্থহীন ছিল।

‘তালেবানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা তাদের দেয়া কথাগুলো রাখে। সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হোক। তাদের পেটানো, আটক করা বন্ধ হোক। ভয়ভীতি ও প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার আতঙ্ক ছাড়াই সংবাদকর্মীদের খবর সংগ্রহ করতে দেয়া হোক।’

চলতি সপ্তাহে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই আফগানিস্তানে বিক্ষোভ কার্যত নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। তারা জানিয়েছে, আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া যেকোনো বিক্ষোভ অবৈধ বলে গণ্য করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর