‘আমরা সম-অধিকার চাই, সরকারে নারীদের দেখতে চাই’ এমন দাবিতে বুধবারও আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন অনেক নারী।
তার এক দিন আগেই দেশটিতে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। সরকার গঠনে নারীদেরও সঙ্গে রাখবে বলে আসলেও সেই সরকারে কোনো নারীকে রাখেনি তালেবান।
এমনকি দেশটিতে এত দিন যে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় ছিল, সেটিও আর রাখেনি তালেবান।
সারা (ছদ্মনাম) বিবিসিকে বলেন, ‘ আমরা এটা মেনে নিতে পারব না এবং এ কারণেই আমরা রাস্তায় নেমেছি।’
গত এক সপ্তাহে কাবুলে যেসব বিক্ষোভ হয়েছে সেখানে সারার এটা দ্বিতীয় অংশগ্রহণ।
আরেক বিক্ষোভকারী জিয়া (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা করছি। এরপর দেখলাম তালেবান যোদ্ধাদের ৪-৫টি গাড়ি আমাদের অনুসরণ করছে। সেখানে ১০ জন তালেবান যোদ্ধা ছিল।’
ওই নারীদের অভিযোগ, তাদের মিছিল থামানো হয়েছে। এরপর তাদের বেত্রাঘাত করা হয়েছে, বিদ্যুতের শক দেয়া হয়েছে, বেয়নেট দিয়ে মারা হয়েছে।
কাবুলের রাস্তায় নারীদের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
জিয়া বলেন, ‘তারা আমার কাঁধে মেরেছে। এতে আমার পুরো শরীর এখন ব্যথা। তারা এত জোরে মেরেছে যে, আমি হাতটাই আর নড়াতে পারছি না।
‘তারা আমাদের সঙ্গে অনেক বাজে ভাষা ব্যবহার করেছে, অনেক দুর্ব্যবহার করেছে। তারা আমাদের যে নামে ডেকেছে, সেটি দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করতে পারব না।’
সারা বিক্ষোভে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকেই মারা হয়েছে। আমাকেও মেরেছে। তারা আমাদের বাড়ি যেতে বলেছে, সেটাই নারীদের জন্য নিরাপদ জায়গা, এটাও বলেছে।’
বিক্ষোভ থামাতে আসলে তালেবানের কর্মকাণ্ড ভিডিও করার সময় তার ফোনটিও কেড়ে নেয়া হয় বলে জানান সারা।
১৫ আগস্ট কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এরপর থেকেই তারা বলে এসেছে, চাকরি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের বাধা দেয়া হবে না।
তবে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ না করা পর্যন্ত নারীদের কর্মস্থলে না গিয়ে বাসায় থাকার আহ্বান জানায় তালেবান।
১৯৯০ দশকে তালেবান দেশটি শাসন করার সময় নারীদের জন্য যেসব আইন চালু করেছিল, নতুন করে ক্ষমতা নেয়ার পর সেই আগের আচরণেই ফিরে আসছে বলে অভিযোগ করেন সারা।
তিনি বলেন, ‘তালেবানের চরিত্র এখনও বদলায়নি। তারা নারীদের অধিকার নিয়ে এখনও আগের অবস্থাতেই রয়েছে।’
তালেবানের ক্ষমতা নেয়ার আগে সারা সরকারের একটি সংস্থায় উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন। সারাকে নিয়ে এখন তার পরিবার খুব শঙ্কিত।
সারা বলেন, ‘পরিবার থেকে আমাকে বলা হয়েছে, আমি যেন বিক্ষোভে না যাই। তারা (তালেবান) আমাকে মেরে ফেলবে। আমি আমার ভাইকেও বুধবার বিক্ষোভে নিয়ে গেছি। আমাদের সোচ্চার হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি যেতেই থাকব, বারবার যাব; যত দিন বেঁচে আছি, যাবই। তিলে তিলে মরে যাওয়ার চেয়ে প্রতিবাদ করে একবারে মারা যাওয়া ভালো।’