আফগানিস্তানে নারী ইস্যুতে নিজেদের করা অঙ্গীকার ভঙ্গ করেই চলেছে কট্টরপন্থি ধর্মীয় গোষ্ঠী তালেবান।
নারীদেরকে সরকারে নেয়া, তাদেরকে চাকরি করতে দেয়ার ঘোষণা দিয়েও পরে উল্টো কথা বলা তালেবান এবার ঘোষণা করেছে ছাত্রীদেরকে এমনভাবে বোরকা ও নেকাব পরতে হবে, যেন কেবল তাদের চোখ খোলা থাকে।
রাজধানী কাবুলের দখল নেয়ার এক মাস যেতে না যেতেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্রীদের আবায়া ও নিকাব পরার নির্দেশ এসেছে, যদিও কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর আদেশ এসেছিল, বোরকা বাধ্যতামূলক নয়।
আবায়া এক ধরনের বোরকা যাতে কাপড় থাকে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। এতে কেবল চোখ খোলা থাকে। হাতের কবজি থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢাকা থাকে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন রোববার জানিয়েছে, তালেবান নিয়ন্ত্রিত দেশটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার কথা রয়েছে সোমবার। এর আগেই দেয়া হয়েছে নানা নির্দেশনা।
এতে জানানো হয়, শনিবার রাতে প্রকাশিত নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, নারী শিক্ষার্থীদের পাঠ দিবেন নারী শিক্ষক। এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নারী শিক্ষক পেতে সমস্যা হলে বয়স্ক শিক্ষক অথবা ‘চরিত্রবান’ শিক্ষক দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে বাধ্যতামূলকভাবে আলাদা শ্রেণিকক্ষ থাকতে হবে। তা সম্ভব না হলে অন্তত পর্দা টাঙিয়ে আলাদাভাবে বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
নারী শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে বের হতে হলে সঙ্গে একজন পুরুষ আত্মীয় থাকতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। অর্থাৎ নারীদের জন্য একা বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে গেল।
৯০ দশকের শেষ ভাগে তালেবান যখন আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিল, সে সময় নারী অধিকার ভীষণভাবে ভুলণ্ঠিত হয়েছে। তাদের শিক্ষা, চাকরির অধিকার কেড়ে নেয়া হয়, একা বাড়ির বাইরে গেলেও নির্যাতনের অভিযোগ আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর সেই তালেবান আবার দেশটির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠার পর নারীদের নিয়ে আবার উদ্বেগ তৈরি হয়। তবে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয় যে, তারা নারীদের বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে।
১৫ আগস্ট কাবুলে প্রবেশের পর জানানো হয়, নারীদেরকে বোরকা পরা বাধ্যতামূলক নয়। তবে হিজাব পরতে হবে।
আগেই ঘোষণা দেয়া হয়, তালেবান জামানায় এবার নারীদেরকে চাকরি করতে দেয়া হবে। তবে পরে নারীদেরকে ঘরে থাকার নির্দেশ এসেছে।
কাবুল দখলের পর নারীদেরকে সরকারে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান তালেবান নেতারা। তবে পরে জানানো হয়, নারীদেরকে সরকারে নেয়া হবে না।
গত শুক্রবার দেশটিতে একাধিক শহরে নারীরা অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। তা তালেবান ভালো চোখে দেখেনি। বেত্রাঘাতের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসে ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে তাদের।