বিস্তর টালবাহানার পর পশ্চিমবঙ্গের ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। আসনটিতে ৩০ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণ হবে এবং ভোট গণনা হবে ৩ অক্টোবর। একই সঙ্গে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের সাধারণ নির্বাচনও হবে।
এই কেন্দ্র থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা। এ জন্য আগেই ভবানীপুরের বিজয়ী প্রার্থী কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ওই কেন্দ্রের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে নির্বাচনে হেরে গিয়েও ৫ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন।
সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, ভবানীপুরের আসনটিতে হারলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতে পারবেন না মমতা। তাই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে এখন এই আসনের উপনির্বাচন।
বিধানসভা নির্বাচন চলার সময় সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের প্রার্থীর মৃত্যু হলে ওই দুই কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।
শনিবার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিন ১৩ সেপ্টেম্বর। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর। এই তিন কেন্দ্রের নির্বাচনের ভোট গণনা হবে ৩ অক্টোবর। ৫ অক্টোবরের মধ্যে পুরো ভোট প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে ৬ সেপ্টেম্বর।
এ বিষয়ে তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘সামনে পূজা আসছে। তিনটি আসনে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। এতে আমরা বেশ খুশি। আমরা বরাবরই দ্রুত উপনির্বাচন করিয়ে নেয়ার পক্ষে। আমরা তো চাই সংবিধানের ৩২৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী নির্বাচন সেরে ফেলুক কেন্দ্র। রাজ্যের বাকি আরও চারটি আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুক কমিশন। এটাই আমাদের আবেদন।’
ভবানীপুর কেন্দ্রের পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা গোসাবায়ও উপনির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই দুই কেন্দ্রের বিধায়কের মৃত্যুতে বিধায়ক পদ শূন্য হয়। দিনহাটা ও শান্তিপুরে বিজেপির বিজয়ী প্রার্থী নিশীথ প্রামানিক ও জগন্নাথ সরকার বিধায়ক পদ ছেড়ে দেয়ায় সেখানে বিধায়ক পদ শূন্য হয়েছে। তবে এই চার কেন্দ্রে এখনও উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেনি কমিশন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিবের অনুরোধে রাজ্যের সাংবিধানিক সংকট এড়াতে ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়েছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারির অজুহাত দিয়ে উপনির্বাচন যেন এখনই না হয়, এ জন্য বিজেপি বিরোধিতা করেছিল। তবে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘উপনির্বাচন হোক। আমরা না বলিনি। আমরা বলেছিলাম, পরিস্থিতি অনুকূল নয়। আমরা বলেছিলাম, যখনই নির্বাচন হবে, তখনই আমরা লড়াই করব। আমরা আগে পৌরসভা নির্বাচন চেয়েছিলাম। যেটা ঘোষণা হয়েছে, সেটা মেনে ভোট হবে।’
করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচন হওয়ায় কমিশন একাধিক নিয়ম জারি করেছে। মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় কোনো মিছিল করা যাবে না। রিটার্নিং অফিসারের অফিসের ১০০ মিটারের মধ্যে তিনটির বেশি গাড়ি রাখা যাবে না।
ইনডোরে ৩০ শতাংশ এবং আউটডোরে ৫০ শতাংশ জমায়েত নিয়ে প্রচার করা যাবে। কোনো রোড শো করা যাবে না। স্ট্রিট কর্নারে ৫০ জনের বেশি জমায়েত করা চলবে না। বাড়ি বাড়ি প্রচারের ক্ষেত্রে পাঁচজন যেতে পারবেন।
এ ছাড়া ভোটের সঙ্গে যুক্ত কর্মী এবং প্রার্থীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী দুই ডোজ টিকা নেয়াও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।