আফগানিস্তানে বিরোধীদের শেষ ঘাঁটি পাঞ্জশির উপত্যকার দখল নিতে উঠেপড়ে লেগেছে শাসকদল তালেবান। প্রদেশটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া স্থানীয় যোদ্ধারাও।
সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঞ্জশিরসহ আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দাবি করেছে তালেবান। ‘বিরোধীদের পরাজিত করে পাঞ্জশির এখন তালেবানের’ বলে শুক্রবার জানায় কট্টরপন্থি গোষ্ঠীটির তিনটি সূত্র।
তবে তালেবানের এ দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঞ্জশিরের তালেবানবিরোধী যোদ্ধারা প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে।
তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা বাহিনী ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের (এনআরএফ) মুখপাত্র আলি নাজারির দাবি, তালেবান পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কয়েক শ তালেবান যোদ্ধা ফাঁদে পড়েছে। তাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে আসছে। তাই তারা আত্মসমর্পণের শর্ত নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।’
অন্যদিকে পরিস্থিতি ‘জটিল’ বলে উল্লেখ করেছেন যোদ্ধাদের অন্যতম নেতা ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, দুই পক্ষেরই বিপুলসংখ্যক যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন লড়াইয়ে।
স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল টোলো নিউজকে তিনি জানান, তার দেশ ছেড়ে পালানোর খবর মিথ্যা। তালেবান বিপুল শক্তিতে এগিয়ে এলেও আত্মসমর্পণ করবেন না এবং আফগানিস্তানের জন্য শেষনিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করবেন।
পাঞ্জশিরে লড়াইয়ে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
কাবুলের উত্তরে আফগানিস্তানের অন্যতম ক্ষুদ্র প্রদেশ পাঞ্জশির। এ প্রদেশটি দখলেই কঠিন প্রতিরোধের মুখে তালেবান। আফগান সেনারা আত্মসমর্পণ করে ফেলায় আগস্টে রাজধানীসহ দেশের সব বড় শহরের নিয়ন্ত্রণ বিনা বাধায় নিয়েছে গোষ্ঠীটি।
একমাত্র ব্যতিক্রম দেড় থেকে দুই লাখ বাসিন্দার ছোট্ট পাঞ্জশির।
আফগানিস্তানে তালেবানবিরোধী যোদ্ধাদের একাংশ। ছবি: এএফপি
আফগান সেনাবাহিনী নয়, অঞ্চলটি ধরে রাখার চেষ্টা করছে সাবেক সেনা ও স্থানীয় লোকজন। পাহাড়ে ঘেরা প্রদেশটিতে লুকিয়ে থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করছেন তারা।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে যখন প্রথম দফায় আফগানিস্তানের শাসনব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল তালেবান, তখনও পাঞ্জশিরের দখল নিতে পারেনি গোষ্ঠীটি।
এবারও তালেবানের পাঞ্জশির দখলের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন প্রদেশটির অন্য নেতারা। তারা জানিয়েছেন, পাঞ্জশিরকে তালেবানের হাত থেকে বাঁচাতে জোটবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ক্ষমতাচ্যুত আফগান সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সাবেক সদস্য ও স্থানীয়সহ কয়েক হাজার যোদ্ধা।
তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আদিবাসী নেতা আহমেদ মাসুদ। আশির দশকে সাবেক সোভিয়েতবিরোধী লড়াই এবং নব্বইয়ের দশকে তালেবানবিরোধী লড়াইয়ে সফল যোদ্ধার সন্তান তিনি।
মাসুদ বলেন, ‘পাঞ্জশির তালেবান দখল করেছে বলে ভুয়া প্রচার চালাচ্ছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম। সবটাই মিথ্যা।’
আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই তালেবানকে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
পাঞ্জশির বাদে আফগানিস্তানের বাকি সব অঞ্চল এখন তালেবানের দখলে। যেকোনো সময় নতুন সরকার ঘোষণা করতে পারে তারা।
কট্টরপন্থি গোষ্ঠীটির সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে শুক্রবার সাড়া দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্য। তবে তারা আফগানিস্তানের সরকার হিসেবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।
কাবুলে কূটনৈতিক উপস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে ইইউ। তবে সবটাই কঠোর শর্ত সাপেক্ষে। আফগান জনতার নিরাপত্তা হবে মূল লক্ষ্য।