বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তালেবানের সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ

  •    
  • ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৩:৫৭

সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে তালেবানকে। বিদ্রোহী থাকাকালীন বছরের পর বছর তারা নিজেরাই আফগান ভূখণ্ডে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এখন শাসক দল হিসেবে আফগান জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতে নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে তালেবান সরকারকে।

২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই দশক পর আরও বেশি শক্তি নিয়ে আফগানিস্তানের মসনদে আবির্ভূত হয়েছে তালেবান। এবার আগের চেয়েও বেশি অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে কট্টরপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

খনিজ সম্পদে ভরপুর আফগানিস্তান চার দশকের বেশি সময়ের সংঘাতে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে। গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটে জর্জরিত দেশটি। এর ওপর কট্টরপন্থি বলে দেশটির নতুন শাসক দল কূটনৈতিকভাবেও একঘরে।

এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পরাশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করে ফিরে এলেও দেশ পরিচালনায় বেশ কিছু বড় বাধার সম্মুখীন হতে হবে গোষ্ঠীটিকে।

তালেবানের সামনে প্রায় অবধারিত পাঁচটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে ডনের প্রতিবেদনে

আস্থার অভাব

দ্বিতীয় দফার শাসনামলে ঠিক কেমন ভূমিকা নেবে তালেবান, তা নিয়ে শঙ্কা-সন্দেহ-উদ্বেগে দিন পার করছে সাধারণ আফগানদের বড় অংশ। তাদের এ শঙ্কা অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দেয়ারও উপায় নেই।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথম দফায় দেশ শাসন করে তালেবান। সে সময় আফগানদের ওপর শরিয়াহ আইনের নামে কঠোর জীবনযাত্রা চাপিয়ে দিয়েছিল ধর্মভিত্তিক দলটি।

নারীদের শিক্ষা গ্রহণ, চাকরি করা ও উন্মুক্ত স্থানে যাওয়া-আসাসহ সব ধরনের মৌলিক অধিকার নিষিদ্ধ, বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শীদের নির্মমভাবে হত্যা করা, হাজারা সম্প্রদায়ের মতো ধর্মীয় ও আদিবাসী সংখ্যালঘুদের ওপর গণহত্যাসহ নানা অরাজকতার জন্ম দিয়েছিল তালেবান যোদ্ধারা।

এবার অবশ্য ক্ষমতা দখলের পর গোষ্ঠীটির সুর কিছুটা নমনীয়। সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একীভূত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইসহ আফগান রাজনীতিতে স্পর্শকাতর বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছে তালেবান নেতারা।

নব্বইয়ের দশকের কঠোর শাসনব্যবস্থার তুলনায় বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর পরিবর্তন দৃশ্যমান করতে শিয়া হাজারা সংখ্যালঘুদের কাছে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন সুন্নিপন্থি তালেবান নেতারা। ১৯৯০ সালের পর তালেবানের বর্বর নিপীড়নের সাক্ষী হয়েছিল হাজারারা।

এ অবস্থায় গ্রামাঞ্চলগুলোতে দীর্ঘ সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটবে, এমন প্রত্যাশায় কিছুটা স্বস্তিতে স্থানীয়রা। কিন্তু শেষ পর্যন্তে কাজে তালেবানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটবে কি না, সে প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত বেশিরভাগ আফগান।

নারী অধিকারের মতো বিষয়ে শিথিলতার কথাও বলেছে তালেবান, তবে শরিয়াহ আইনের আওতায় যার অর্থ স্পষ্ট করেনি গোষ্ঠীটি। নারীরা, বিশেষ করে যারা শহরে থাকেন, তারা এখন থেকেই ঘরবন্দি। না পারতে বাইরে বের হলেও আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা থাকছে তাদের।

অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয়

বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ আফগানিস্তান। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের অভিযানে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিপুল পরিমাণে বিদেশি সহায়তা পেয়েছিল দেশটি।

২০২০ সালেও বেসামরিক সরকারশাসিত আফগানিস্তানে মোট বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ৪০ শতাংশের বেশি এসেছিল আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে।

তালেবান ক্ষমতা দখলের পর সেসব সহায়তার বেশিরভাগই স্থগিত করা হয়েছে। বাকি সহায়তার বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে গচ্ছিত আছে, তাতেও প্রবেশাধিকার পাবে না তালেবান শাসকগোষ্ঠী।

সব মিলিয়ে তালেবানের নতুন সরকার বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা, পানি, বিদ্যুৎ আর পরিবহনের মতো সেবা-পরিষেবাগুলো চালু রাখা অনিশ্চিত।

দীর্ঘ সংঘাতের পাশাপাশি তীব্র খরার কারণে খাদ্যের মজুত কমছে বলে খাদ্যসংকটের দিক থেকেও আফগানিস্তান মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের মতে, বিদ্রোহী থাকাকালীন আফিম-হেরোইনসহ নানা খাত থেকে তালেবানের নিজস্ব আয় অবশ্য কম ছিল না। কিন্তু আফগানিস্তানের জাতীয় বাজেটের সামনে সে আয় কিছুই নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ দফায় আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর অবশ্য আয়ের কিছু খাত নিশ্চিত করেছে তালেবান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সীমান্ত পারাপার থেকে শুল্ক বাবদ প্রাপ্ত রাজস্বের কথা। কিন্তু জাতীয় চাহিদার তুলনায় এ আয়ও খুব সামান্য।

মেধা পাচার

নগদ অর্থের সংকটের পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ে তীব্র অভাবের মুখে পড়তে যাচ্ছে আফগানিস্তানের নতুন শাসক দল। তা হলো দক্ষ জনশক্তি।

গত ১৫ আগস্ট তালেবান রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের উদ্ধার অভিযানের সুযোগে দুই সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে প্রায় এক লাখ আফগান।

দীর্ঘ অস্থিতিশীলতার কারণে আগেও অনেক মানুষ যে যেভাবে পেরেছে, দেশ ছেড়েছে। এদের অনেকেই ছিলেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষতা-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও সম্ভাবনাময়।

আমলা, ব্যাংকার, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ, বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী তালেবানের শাসন থেকে বাঁচতে চেয়েছে।

মেধা পাচারের এ সংকট যে আফগান অর্থনীতিকে সামনের দিনগুলোতে আরও বড় সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে, সে বিষয়ে তালেবানও অবগত।

দক্ষ জনশক্তিকে দেশ না ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেছেন তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ। চিকিৎসা-প্রকৌশলে ‘বিশেষজ্ঞ’দের দেশে প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

কূটনীতিতে কোণঠাসা

প্রথম দফার শাসনামলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘অচ্ছুত’ ছিল আফগানিস্তানের তালেবান সরকার।

এবার গোষ্ঠীটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পেতে উদগ্রিব হিসেবেই দৃশ্যমান হয়েছে। যদিও এরই মধ্যে বেশিরভাগ দেশ কাবুলে নিজেদের কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে বা কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে।

এ অবস্থায় আপাতত আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মুখাপেক্ষী তালেবান। কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগেই প্রতিবেশী পাকিস্তান, ইরান, চীন, রাশিয়া আর কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে গোষ্ঠীটি।

কোনো দেশই আফগানিস্তানের নতুন সরকার হিসেবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি এখনও। যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, স্বীকৃতি ‘অর্জন করে নিতে হবে’ তালেবানকে।

আফগানদের নিরাপদে দেশ ছাড়তে দিতে তালেবানের ওপর চাপ প্রয়োগ করা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবে ভেটো না দিলেও সম্মতিও দেয়নি দ্বিধাবিভক্ত চীন ও রাশিয়া।

আইএস জঙ্গিদের আধিপত্যের শঙ্কা

আফগানিস্তানের শাসনব্যবস্থা এখন তালেবানের করায়ত্তে হলেও তাদের বিদ্রোহী যুগের অবসানের সঙ্গে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি মুছে যায়নি।

সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। গত সপ্তাহেই কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলায় কমপক্ষে ১৮০ জন নিহতের ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে আইএসের আঞ্চলিক শাখা আইএস-কে।

বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় হাজার সেনার উপস্থিতিতে ওই হামলায় প্রাণ গেছে ১৩ জন আমেরিকান সেনারও।

তালেবান ও আইএস কট্টরপন্থি ও উগ্রবাদী। কিন্তু আইএসের দৃষ্টিকোণ থেকে শরিয়াহ আইন তালেবানের সংস্করণের চেয়েও অনেক বেশি কট্টর।

আফগানিস্তানে লড়াই অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে আইএস। নিজেদের বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি তালেবানকে আখ্যায়িত করেছে ‘ধর্মত্যাগী’ বলে।

এ অবস্থায় সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে তালেবানকে। বিদ্রোহী থাকাকালীন বছরের পর বছর তারা নিজেরাই আফগান ভূখণ্ডে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।

এখন শাসক দল হিসেবে আইএসের হামলা থেকে আফগান জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিতে নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে তালেবান সরকারকে।

এ বিভাগের আরো খবর