এক চিমটি লবণ কম বা বেশিতে খাবারের স্বাদের ব্যাপক তারতম্য হয়। খাবার সুস্বাদু করতে তাই লবণের পরিমাণের দিকে নজর দিতে হয়।
খাবারে বেশি লবণ আবার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, সোডিয়াম ক্লোরাইড যৌগের সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণে হৃদরোগ থেকে শুরু করে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।
একই সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে অপর্যাপ্ত পটাশিয়াম রক্তপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলেও বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে।
এ দুই সমস্যা একসঙ্গে সমাধানের লক্ষ্যে লবণের বিকল্প অনেক সুপার মার্কেটে পাওয়া যায়। বিকল্প এ পণ্যের স্বাদ লবণের মতোই। শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমাতে এবং পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়াতেই এ পণ্য তৈরি করা হয়।
অবশ্য স্ট্রোক, হৃদরোগসহ অন্যান্য শারীরিক জটিলতা ঠেকাতে লবণের এ বিকল্প কতটুকু কার্যকর, এ বিষয়ে বড় আকারে কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার গবেষণা সংস্থা জর্জ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের মহামারি বিশেষজ্ঞ ব্রুস নিল বলেন, ‘বিশ্বে মোটামুটি সবাই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি লবণ খায়।
‘লবণের বিকল্প পাওয়া গেলে বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঠেকানো যাবে।’
এ লক্ষ্যে নিল ও তার দল চীনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন বলে সায়েন্স অ্যালার্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
যাদের স্ট্রোক হয়েছে বা রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, চীনের গ্রামাঞ্চলের এমন ২০ হাজার মানুষ পরীক্ষায় অংশ নেন।
ওই সব অংশগ্রহণকারী চীনের ৬০০টি গ্রামের বাসিন্দা। তাদের গড় বয়স ৬৫ বছর।
পাঁচ বছর সময়কালের ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অর্ধেককে লবণের বিকল্প দেয়া হয়। এই বিশেষ লবণে কম সোডিয়াম ও বাড়তি পটাশিয়াম ছিল।
নিয়ন্ত্রিত গ্রুপে থাকা বাকি গ্রামবাসীকে আগের মতোই তাদের রান্নায় লবণ ব্যবহার করতে বলা হয়।
পরীক্ষার শেষে এই দুই দলের শরীরে উল্লেখযোগ্য বৈপরিত্য দেখা যায়।
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছরের পরীক্ষায় দেখা যায়, নিয়ন্ত্রিত দলের ব্যক্তিদের স্ট্রোক ও হৃদযন্ত্রের বড় ধরনের জটিলতায় মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে বিকল্প লবণ গ্রহণ করা ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য হারে কম স্ট্রোক হয়। পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের জটিলতায় তুলনামূলকভাবে কম ভোগেন তারা। এ দলের মধ্যে মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রিত দলের তুলনায় কম।
গবেষকদের ভাষ্য, তাদের গবেষণার ফল আগে করা পরীক্ষার চেয়ে কার্যকর। এর মাধ্যমে বিশ্বে প্রতিবছর ৪ লাখ ৬০ হাজার অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব।