করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের গতি বাড়াতে নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন থাইল্যান্ডের গবেষকরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘অটোভ্যাক’ নামের এ প্রযুক্তি আদতে একটি যান্ত্রিক হাত। একটি ভায়াল বা শিশি থেকে চার মিনিটে ১২ ডোজ টিকা সংগ্রহ করে ১২টি সিরিঞ্জে ওষুধ ঢোকাতে সক্ষম এটি।
আপাতত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফার্মাসিউটিক্যালসের গবেষণালব্ধ টিকার ক্ষেত্রেই এ হিসাব প্রযোজ্য।
যন্ত্রটি তৈরি করেছেন চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা বলছেন, মহামারির এ সময়ে প্রয়োজনের তুলনায় টিকার জোগান কম। এমন পরিস্থিতিতে টিকার অপচয় অনাকাঙ্ক্ষিত। নতুন যন্ত্রটির মাধ্যমে ডোজের অপচয় কমানোও সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী টিকাকেন্দ্রে গত সোমবার থেকে অটোভ্যাক ব্যবহার করা হচ্ছে। মানুষের হাত দিয়ে যে সময়ে ১০ ডোজ আলাদা করা সম্ভব, সে সময়ে অটোভ্যাকের মাধ্যমে করা যাবে ১২ ডোজ বা ২০ শতাংশ বেশি।
প্রাথমিকভাবে অটোভ্যাক শুধু অ্যাস্ট্রাজেনেকার মাল্টি-ডোজ ভায়ালের ওপরই কাজ করে। ভায়ালের গায়ে লেখা তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি থেকে ১০ বা ১১ ডোজ পর্যন্ত টিকা সংগ্রহ করা সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ সেন্টারের অটোভ্যাক উদ্ভাবনকারী দলের প্রধান গবেষক জুথামাস রাতানাবারাপর্ন বলেন, ‘এ যন্ত্র ব্যবহার করে সঠিক পরিমাণে ডোজ সংগ্রহ করা সম্ভব। এতে নিশ্চিতভাবে প্রতিটি ভায়াল থেকে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ ডোজ মিলবে।
‘একেকটি ভায়াল থেকে স্বাভাবিকভাবে ১০ ডোজ টিকা বের করা যায়। এই যন্ত্র ব্যবহার করে ওই ভায়াল থেকেই ১২ ডোজ টিকা বের করছি আমরা। অতিরিক্ত ২০ শতাংশের অর্থ হলো এ মুহূর্তে দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ১০ লাখ মানুষের জন্য মজুত থাকলে তা নিতে পারবে আরও দুই লাখ বেশি মানুষ।’
গবেষকরা জানান, টিকার অপচয় কমাতে দরকার ভায়াল থেকে সঠিক পরিমাণে ডোজ নিয়ে সিরিঞ্জে ঢোকাতে সক্ষম দক্ষ জনবল। এ কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রচুর সময় ও শক্তি ব্যয় হয়। কারণ অনেক মাস ধরে একই কাজ প্রতিদিন করতে হয় তাদের। এ সমস্যা থেকে তাদের মুক্তি দিতে পারে অটোভ্যাক।
৬ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের দেশ থাইল্যান্ড। দেশটিতে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯ শতাংশ এক বা দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। টিকার মজুত কম বলে ব্যাহত হচ্ছে কার্যক্রম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ২০টির বেশি অটোভ্যাক ইউনিট উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু এ প্রযুক্তিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে সরকারের সহযোগিতা ও আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
একেকটি অটোভ্যাক তৈরিতে থাই মুদ্রায় ২৫ লাখ বাথ বা ৭৬ হাজার ২৪৩ ডলার করে খরচ হয়। সিরিঞ্জসহ অন্যান্য উপকরণের খরচও এর আওতাভুক্ত।
ভবিষ্যতে এটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্যে পরিণত হতে পারে বলেও আশাবাদী গবেষকরা।
ফাইজার, মডার্নাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণালব্ধ করোনা টিকার ক্ষেত্রে কার্যকর অটোভ্যাক তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে বিজ্ঞানীদের।