যখন কোনো ভাইরাস কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে থাকে এবং কোনো জাতি সেই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচতে শুরু করে তাকে বলা হয় এন্ডেমিক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ভারত সেই এন্ডেমিক পর্যায়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
তার ভাষ্য, যখন কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় একটি রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তাকে নিয়ন্ত্রণ করেই লোকজন বাঁচতে শুরু করে সেই পরিস্থিতিই এন্ডেমিক। এটা একটা সময় জাতিগত রোগে পরিণত হয়।
জাতিগত রোগে রূপ নিয়ে করোনা স্থায়ী রূপ নেবে বলে ধারণা সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞদের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই বিজ্ঞানী এমন এক সময় এ কথা জানালেন যখন ভারত দৈনিক সংক্রমণ কমিয়ে ২৫ হাজারের কোটায় এনেছে। এপ্রিলে ভারতে দৈনিক সংক্রমণ ৪ লাখ ছাড়িয়েছিল।
ভারত এখনও করোনার তৃতীয় ধাক্কার সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যেই এই ধাক্কা সামলাতে হতে পারে বলে সতর্ক করেন তারা।
এ ছাড়া দেশটিতে নতুন করে করোনার ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে পারে এবং বেশি জনসংখ্যার দেশটি এই ধাক্কা সামলাতে কতটা প্রস্তুত সেটি নিয়েও সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নারী বিজ্ঞানী স্বামীনাথান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শুধু ভারত নয়, ভারতের মতো অনেক দেশ এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেসব দেশে এখন সর্বনিম্ন সংক্রমণ ধরা পড়ছে। কয়েক মাস আগেও দেশগুলোতে সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় এবং এখন ঠিক তার বিপরীত অবস্থানে এসেছে।
এন্ডেমিক পর্যায়ে একটি রোগ দেশটির জনসংখ্যার বড় অংশকে সংক্রমিত করে এবং তাদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। সেটা টিকাদান থেকে হতে পারে আবার অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমেও হয়।
মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. ললিত কান্ত বলেন, ‘এই পর্যায়ে রোগটি খুব ধীর গতিতে ছড়াতে থাকে।’
প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ডা. শহীদ জামিল বলেন, ‘এন্ডেমিক অর্থ এই নয় যে সংক্রমণ হয় না। বরং এটি সংক্রমিত করলেও তা বিশাল পরিসরে ছড়ায় না।’
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শুধু ভারত নয়, সব দেশেই এমন হওয়ার কথা।
বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, পাঁচ বছর পরে হঠাৎ সর্দি-জ্বর হলে সেটা আবার আগের মতো স্বাভাবিক মনে হবে। তখন পরীক্ষা করালে দেখা যাবে সেটা করোনাভাইরাস।
তবে পরীক্ষার আগে রোগটিকে সাধারণ ফ্লু বা সর্দি-কাশি হিসেবেই মনে করতে থাকবেন লোকজন। দেখা যাবে, সেখানে করোনার কোনো লক্ষণও নেই।
বেশি দিন জ্বর-কাশি নয়, অল্প একটু কাশিতেও নমুনা পরীক্ষা করলে সেটি করোনা শনাক্ত হতে পারে। অর্থাৎ রোগটির তীব্রতা ধীরে ধীরে কমে আসবে এবং তা মহামারি থেকে একটি জাতিগত রোগে পরিণত হবে।
আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ এবং ইমিউনোলজি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজের তিনজন অধ্যাপক এক গষেণায় দাবি করেছেন, করোনা এত সহজেই শেষ হচ্ছে না।
তারা বলেন, করোনা একেবারে স্বাভাবিক রোগ হবে তা এখনই দাবি করা যাচ্ছে না। তবে পৃথিবী সেদিকেই এগোচ্ছে। মানুষের এই ভাইরাস প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে। ফলে এটি জাতিগত রোগে পরিণত হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞানী স্বামীনাথান বলছেন, ভারত সেই প্রক্রিয়ার দিকেই এগোচ্ছে। এমনকি সে প্রক্রিয়া দেশটিতে শুরু হয়ে গেছে।
শুধু ভারত নয়, বিভিন্ন দেশেই সেই প্রক্রিয়া চলছে। করোনার বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে। নতুন বাস্তবতায় জীবন শুরু হয়েছে দেশগুলোতে।