আফগানিস্তানে কট্টর ধর্মীয় গোষ্ঠী তালেবানের কথিত ইসলামি আমিরাত প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে ভারতের মুসলমানদের একটি সংগঠন। তারা বলছে, আফগানিস্তানের মানুষ তালেবানের ইসলামি রাষ্ট্র চায় না, তারা শান্তি চায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইন্ডিয়ান মুসলিমস ফর সেকুলার ডেমোক্রেসি (আইএমএসডি) নামে ওই সংগঠনটি সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতের মুসলমানদের অবশ্যই আফগানিস্তানে ইসলামি আমিরাত প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
আইএমএসডি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা এর আগে দখলদার যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনীর পুতুল সরকার এবং পরে প্রতিক্রিয়াশীল তালেবানের কাছে বন্দি হয়ে পড়া অসহায় আফগান নাগরিকদের প্রতি সংহতি জানাই। তালেবান তাদের আগের শাসনামলে সবচেয়ে কিছু মৌলিক মানবাধিকার ও আফগান জনগণের স্বাধীনতাকে পদদলিত করেছিল।’
ভারতীয় মুসলমানদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি বলছে, পৃথিবীর কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনেরই তালেবানের কাবুল দখলকে স্বাগত জানানো উচিত নয়।
আইএমএসডির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তালেবানের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখা। তালেবান এবারের শাসনে মানুষের স্বাধীনতা এবং নারী-শিশুদের অধিকার রক্ষার যে অঙ্গীকার করেছে সেটিও পর্যবেক্ষণ করা দরকার। কেননা গোষ্ঠীটির আগের আমলে আফগানিস্তান পৃথিবী বুকেই একটি দোজখে পরিণত হয়েছিল।’
কাবুল দখলের পর ইতোমধ্যে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে তালেবান। তবে সেটা গতানুগতিক ধারায় নয়। সবার আগে ঘোষণা করা হয়েছে অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তালেবান সরকারের অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন গুল আগা। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হতে যাচ্ছেন সাদর ইব্রাহিম।
এর আগে ১৯ আগস্ট গোষ্ঠীটির মুখপাত্র ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি জানান, আফগানিস্তান পরিচালনায় গণতন্ত্রের কোনো সম্পৃক্ততা রাখবে না তালেবান।
নারীরা শিক্ষাগ্রহণ করবেন কি না, কী ধরনের পোশাক পরবেন, সেসব সিদ্ধান্ত নেবেন ওলামারা (ধর্মীয় শিক্ষাবিদ)।
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিকব্যবস্থার ছিটেফোঁটাও থাকবে না শাসনব্যবস্থায়। কারণ আমাদের দেশে এর কোনো ভিত্তিই নেই।
‘আফগানিস্তানে কী ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা দাঁড় করানো হবে, তা নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। কারণ এটা স্পষ্ট। শরিয়াহ আইন অনুযায়ী দেশ চলবে। কথা শেষ।’
১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের মুখে কাবুল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হওয়া কওমি মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র গোষ্ঠীটি সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে চুক্তিতে আসে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করে।
কাবুল দখলের আগে তালেবান চীনের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছে। সেখানে এক পক্ষ আরেক পক্ষের পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিল।
তালেবানের বিরোধিতা করছে না রাশিয়াও; বরং মস্কো থেকে এক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, তালেবানই দেশটির জন্য ভালো বলে তারা মনে করছে।
অবশ্য জার্মানি জানিয়ে দিয়েছে, শরিয়া আইনে দেশ চালালে আফগানিস্তানে তারা সহায়তা বন্ধ করে দেবে। পশ্চিমা আরও কিছু দেশ অর্থ সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।