ভারতের শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত চলা টয় ট্রেন জনপ্রিয়তা পেয়েছে পর্যটকদের কাছে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মর্যাদা পাওয়া এ ট্রেনের পরিচালনা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে চায় সরকার। এ নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
মালিকানা বদল নিয়ে বিতর্কের মাঝেই বুধবার ফের চালু করা হয়েছে টয় ট্রেন। করোনা সতর্কতা মেনে মাত্র দুজন যাত্রী নিয়েই ট্রেনটি ছুটেছে গন্তব্যে। মূলত হেরিটেজ মর্যাদা ধরে রাখতেই তড়িঘড়ি এ উদ্যোগ বলে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ।
করোনা পরিস্থিতিতে দেড় বছর বন্ধ ছিল ভারতীয় রেলের আকর্ষণীয় টয় ট্রেন। ইউনেসকোর দেয়া ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মর্যাদা ধরে রাখতে বুধবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের উদ্দেশে যাত্রা করে ট্রেনটি। নতুন করে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে টয় ট্রেনের যাত্রা উদ্বোধন করেন কাটিহারের ডিআরএম শুভেন্দু কুমার চৌধুরী।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, পূজার আগে শৈল নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে টয় ট্রেনের সঙ্গে একটি ভিস্তাডোম কোচ যোগ করা হয়েছে। এটি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে চলেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ২২ মার্চ থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। টয় ট্রেন চলাচল বেশি দিন বন্ধ থাকলে হেরিটেজ মর্যাদা হারাতে পারে- এমন শঙ্কা নিয়ে আলোচনা চলছিল কিছুদিন ধরেই। তাই করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই আবার চালু হয়েছে টয় ট্রেন।
মাত্র দুজন পর্যটক নিয়ে বুধবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের উদ্দেশে যাত্রা করে টয় ট্রেন। যাত্রীসংখ্যা বিবেচনা ছাড়াই এখন থেকে প্রতিদিন টয় ট্রেন চলবে বলে জানিয়েছে রেলের একটি সূত্র।
এদিকে পাহাড়ের অন্যতম আকর্ষণ টয় ট্রেনকে বেসরকারি খাতে ছাড়ার উদ্যোগে ক্ষুব্ধ রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
আলিপুরদুয়ার ডিস্ট্রিক্ট ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘হেরিটেজ সম্পত্তি বিক্রি বা বেসরকারীকরণের চেষ্টার ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানাই। এতে পর্যটকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, দ্বিগুণ টাকা দিতে হবে ভ্রমণের জন্য। যদি সবই বিক্রি করে দিতে হয়, তবে দেশে সরকার আছে কী করতে?’
চলচ্চিত্র পরিচালক সুদেষ্ণা রায় বলেন, ‘আমরা কি আমাদের ঐতিহ্য বিক্রি করে দেব?’
বিশিষ্ট চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘টয় ট্রেন আমাদের হেরিটেজ। যদি সেখানে দুর্নীতি থাকে, সমস্যা হয়, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবে সরকার। তা না করে বিক্রি করতে চাইছে।’
সিপিএমের মালদা জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘আগামী দিনে দেশকে দেউলিয়া করার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বিজেপি সরকার। টয় ট্রেন বিক্রির সব রকম প্রতিবাদ করব আমরা।’
কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলার সভাপতি শংকর মালাকার বলেন, ‘কংগ্রেস দেশের জন্য বহু সংস্থাকে জাতীয়করণ করেছিল। আর বিজেপি সব বেচে দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রতিবাদে এখনই রাস্তায় নামা দরকার।’
রাজ্যের সাবেক পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘ইউনেসকো টয় ট্রেনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মর্যাদা দিয়েছে। তা বেচে দেয়া যায় না। টয় ট্রেন পর্যটনশিল্পকে চাঙা রাখে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবে মেনে নেয়া হবে না। যেভাবেই হোক রুখতে হবে কেন্দ্রের এই খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত।’
ভারতের রেলপথকে ১২টি ক্লাস্টারে ভাগ করে বিভিন্ন রুটে ১৫৫টি ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত টয় ট্রেনও এ তালিকায় আছে। জমি, স্টেশন ব্যবহারসহ লিজের ভিত্তিতে ৩০ বা ৫০ বছরের জন্য বেসরকারি সংস্থার হাতে ট্রেনের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব তুলে দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের। ২০২৫ সালের আগেই এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইছে কেন্দ্র।
এর আগে পাহাড়ি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল টয় ট্রেনের লাইন। ফলে দীর্ঘদিন শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত টয় ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। করোনা সংক্রমণে ফের ট্রেন চলাচল আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বুধবারই ফের আঁকাবাঁকা পথে ছুটল টয় ট্রেন।