বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক বাঘ, রাজার ২৫তম জন্মদিন সোমবার ২৩ আগস্ট পালন হলো পশ্চিমবঙ্গের জলদাপাড়ার খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
করোনা আবহে রাজার ২৫তম জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানটি রাজকীয় না হলেও খয়েরবাড়িতে রাজার এনক্লোজারটি পরিষ্কার করা হয়। সেখানে একটি বড় বোর্ডে রাজার জীবনের কথা তুলে ধরা হয়। তাকে নিয়ে তৈরি হয় দুটি ভিডিও। সঙ্গে দুটি পোস্টার দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঘ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার করেন বনদপ্তরের কর্তারা।
রাজার জন্মদিন উপলক্ষে দেশব্যাপী অনলাইনে ‘বাঘা’ নামে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তাকে নিয়ে অঙ্কন প্রতিযোগিতারও ব্যবস্থা ছিল।
পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, ‘সম্ভবত বিশ্বের সব থেকে বৃদ্ধ বাঘ রাজা। সেই বাঘ আমাদের রাজ্যে রয়েছে। তাই উৎসাহ কিছুটা বেশি।’
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও দীপক এম বলেন, ‘দীর্ঘদিন রাজা একটা পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত। তাই তাকে একটুও বিরক্ত না করে, রাজার ২৫তম জন্মদিনে বাঘ ও বন্যপ্রাণ সুরক্ষায় মানুষকে আরও বেশি সচেতন করতে এই উদ্যোগ।’
জলদাপাড়ার জাতীয় উদ্যানের বনকর্তারা জানাচ্ছেন, ‘রাজার জন্ম সুন্দরবনে। ২০০৮ সালে ১২ বছর বয়সে এক দুর্ঘটনায় পেছনের একটা পা হারায় সে। গভীর জঙ্গলে একটা খাঁড়ি পেরোনোর সময় কুমিরের হামলায় পেছনের একটা পা খোয়ায় বাঘটি। কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে দীর্ঘ সময় জঙ্গলে পড়ে থাকে। স্থানীয় বনকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাঠায়।
তাকে বাঁচিয়ে রাখা চিকিৎসকদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে তাকে পাঠানো হয় আলিপুরদুয়ার জেলার খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ায় ঘা শুকানোর আগেই অসুস্থ হয়ে পড়ে রাজা। দুদিন কিছু মুখে তোলেনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি চিকিৎসকরা। ধীরে ধীরে খাবার খেতে শুরু করে রাজা। পায়ের ঘা শুকিয়ে গেলে একটা নকল পা লাগিয়ে দেন বনদপ্তরের চিকিৎসকরা।
একটা নকল পা নিয়ে রাজকীয় চেহারা আর মেজাজে ফেরে সে। তাই তার নাম দেয়া হয় রাজা।
রাজার এত দীর্ঘ বছর বেঁচে থাকার রহস্যটা কী?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জঙ্গলের স্বাভাবিক নিয়মে এত বছর বাঁচা সম্ভব হতো না তার। বাঘের স্বাভাবিক আয়ু বড় জোর ১৮ বছর। শরীরে ক্ষত নিয়ে শত্রু বাঘের সঙ্গে লড়াই করে আরো ৪-৫ বছর কম বাঁচত। কিন্তু এখানে অন্য বাঘ বা প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই নেই। নিয়মমতো খাবার পাচ্ছে। তাই শরীরের শক্তি কম ক্ষয় হচ্ছে। স্বাভাবিক কারণে অন্য বাঘের থেকে সে বেশিদিন বাঁচবে।