বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আফগানিস্তানে বর্তমান অরাজকতার ৩ কারণ

  •    
  • ২৩ আগস্ট, ২০২১ ১৬:৪০

জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি হিসেবে একটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে পেন্টাগনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা হয়েছিল। কাবুল বিমানবন্দর পর্যন্ত তালেবান পৌঁছে গেলে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে নাগরিকদের সরিয়ে নেবে, সে সংক্রান্ত কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু তেমন পরিস্থিতি যে বাস্তবে তৈরি হতে পারে, তা কেউ কল্পনাতেও ভাবেননি বলে বিষয়টি আড়ালেই থেকে গিয়েছিল।

সময়, ইচ্ছা আর আস্থা- এই তিনটি বিষয়ে ভুল সমীকরণের কারণে আফগানিস্তান থেকে সুশৃঙ্খলভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসে রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা ছিল যে তাদের হাতে অঢেল সময় আছে। আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান সেনাদের দৃঢ়তাও অত্যধিক মূল্যায়ন করেছিল তারা।

একই সঙ্গে কাবুল ছেড়ে তড়িঘড়ি পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির ওপরেও অতিরিক্ত আস্থা রেখেছিল।

টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে বসে শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আফগানিস্তান থেকে পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন।

যদিও পরিকল্পনার দুই সপ্তাহ আগেই ঘোষণা দিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

আমেরিকান প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন, জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক এ মাইলি ও হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তা আর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বৈঠকটিতে উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বৈঠকে যোগ দেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।

চার ঘণ্টা পর দুটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছিল। প্রথমত, পেন্টাগন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছিলেন যে আফগান ভূখণ্ডে অবস্থানরত বাকি সাড়ে তিন হাজার আমেরিকান সেনাকে ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে নিতে পারবেন তারা; অর্থাৎ সে সময় বাইডেনের ঘোষিত তারিখ ১১ সেপ্টেম্বরের দুই মাস আগেই।

পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল বাগরাম বিমান ঘাঁটি বন্ধ করে দেয়া। আফগানিস্তানে দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধ এ ঘাঁটি থেকেই পরিচালনা করেছে আমেরিকান সেনাবাহিনী।

দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস চালু রাখার পরিকল্পনা ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এর ফলে দূতাবাসের দায়িত্ব পালনে প্রায় দেড় হাজার আমেরিকান নাগরিক সেখানে থেকে যেতেন এবং তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হতো ৬৫০ সেনাকে।

ওই বৈঠকে একটি গোয়েন্দা বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, আফগান সেনারা তালেবানকে এক বা দুই বছর পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম।

জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি হিসেবে একটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়েও সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা হয়েছিল। কাবুল বিমানবন্দর পর্যন্ত তালেবান পৌঁছে গেলে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে নাগরিকদের সরিয়ে নেবে, সে সংক্রান্ত কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু তেমন পরিস্থিতি যে বাস্তবে তৈরি হতে পারে, তা কেউ কল্পনাতেও ভাবেননি বলে বিষয়টি আড়ালেই থেকে গিয়েছিল।

টাইমসের মতে, ‘ওই বৈঠকের চার মাস পর পরিকল্পনাটি ধুলায় মিশে গিয়েছে। ব্যর্থতার কারণ, সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে পারবেন- এমন ধারণা মাথায় রেখে বাইডেন প্রশাসনের একের পর এক ভুল হিসাব করে যাওয়া।’

দূতাবাসের নিরাপত্তা আর নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরানোর বিষয়ে অর্ধশতাধিক বৈঠক করেছেন বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনে তালেবানের কাবুল দখলের মুখে ভেস্তে যায় সব পরিকল্পনা।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাইডেনের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আফগান সেনাবাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু অন্তত বছর দেড়েকের আগে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেবে বা সপ্তাহ না পেরোতেই আফগান বাহিনী ধরাশায়ী হয়ে যাবে, এমনটা ভাবেননি কেউ।

পেন্টাগনে এপ্রিলের বৈঠকের পাঁচ দিন পর জেনারেল মাইলি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান সেনাদের পর্যাপ্ত সামরিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

কাবুলের আমেরিকান দূতাবাস খোলা থাকবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানালেও পরে গত ২৭ এপ্রিল দূতাবাসের তিন হাজার কর্মীকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়। ১৫ মে নতুন নির্দেশনায় আফগানিস্তানে অবস্থানরত সকল আমেরিকানকে অবিলম্বে দেশটি ত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়।

গত ২৫ জুন হোয়াইট হাউসে বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ঘানি। সে সময় সেনা প্রত্যাহার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি ক্ষোভ জানালেও সে প্রতিক্রিয়া জনতার সামনে তিনি প্রকাশ করেননি বলে জানায় টাইমস।

তবে সে সময় যুক্তরাষ্ট্রকে তিনটি অনুরোধ করেছিলেন ঘানি।

প্রথমত, বিদেশি সেনাদের সহযোগিতা করা আফগান দোভাষী ও অন্যান্যদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেয়ার সংখ্যা সীমিত রাখার আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, গণহারে সাহায্যকারীরা দেশ ছাড়তে শুরু করলে সাধারণ আফগানদের ধারণা হতো যে ঘানি সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা নেই।

এ ছাড়া তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান বাহিনীকে বিমান হামলায় সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি চুক্তি ও অন্যান্য নিরাপত্তা সহযোগিতা চেয়েছিলেন ঘানি।

বিমান হামলায় সহযোগিতা এবং আফগান সহযোগীদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি প্রচারণা না চালানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন বাইডেন।

ঘানির কাছে বাইডেনের একটিই অনুরোধ ছিল- তালেবানের বিরুদ্ধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকা।

কিন্তু সে অনুরোধ রাখেননি ঘানি। দেশজুড়ে তালেবানের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অভিযানের পরিবর্তে তিনি রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শহরকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন।

৮ জুলাইয়ের মধ্যে আফগানিস্তান ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব সেনা। এরপরই দেশজুড়ে নিজেদের জাল বিস্তৃত করতে শুরু করে তালেবান। পাঁচ দিনের মাথায় সরাসরি আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনকে চিঠি পাঠান যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ কূটনীতিক।

পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে আফগান সহযোগীদের সরিয়ে নেয়া শুরু করতে প্রয়োজনীয় ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছিলেন তারা। তার চেয়েও দ্রুত তাদের ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্নেরও অনুরোধ করেছিলেন।

৩ আগস্ট ওয়াশিংটনে আরেকটি বৈঠক করেন শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। আফগানিস্তানের সরকার একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে এবং কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে কাবুলেরও পতন ঘটতে পারে বলে উদ্বেগ জানান তারা; কিন্তু তখনও নিশ্চিতভাবে এটাই ঘটতে যাচ্ছে বলে জানতেন না।

আফগান সরকারের চূড়ান্ত পতন

৬ আগস্ট সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ পরিণতি পর্যালোচনা করে পেন্টাগন।

১১ আগস্ট নাগাদ অবিশ্বাস্য দ্রুততায় তালেবানের অগ্রগতির মুখে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের ডেকে পাঠান বাইডেন। জানতে চান, আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান নাগরিকদের উদ্ধারে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা পাঠানোর সময় হয়েছে কি না।

এরপরই এক রাতে কাবুলের নিকটবর্তী কান্দাহার ও গজনির নিয়ন্ত্রণ হারায় ঘানি সরকার। ১৫ আগস্ট রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান।

এ বিভাগের আরো খবর