বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আফগানিস্তানে আতঙ্কের নাম হাক্কানি নেটওয়ার্ক

  •    
  • ২২ আগস্ট, ২০২১ ২১:৪৮

তালেবানের এবারের রাজনৈতিক প্রকল্পে হাক্কানিরা যে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, তা কাবুলে একই সময়ে আনাস, সিরাজুদ্দিন ও খলিলের উপস্থিতিতে টের পাওয়া যাচ্ছে। আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠনের আলোচনায় হাক্কানিদের অংশগ্রহণ সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে নতুন সরকার গঠন নিয়ে তালেবানের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।

ওই নেতাদের মধ্যে দেশটির কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের এক প্রতিনিধিও রয়েছেন।

গত কয়েক দশকে নিজেদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিতে সফল হয় হাক্কানি নেটওয়ার্ক।

আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ কয়েকটি হামলার সঙ্গে ঘুরেফিরে বারবারই হাক্কানি নেটওয়ার্কের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই সব হামলায় বেসামরিক আফগান নাগরিক থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা ও বিদেশি সেনা প্রাণ হারায়।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানজুড়ে এই সংগঠন ব্যাপক কুখ্যাতি কুড়ালেও তালেবানের এবারের শাসনামলে তারা প্রভাবশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে।

কারা এই হাক্কানি

আশির দশকে সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ে আলোচিত যোদ্ধা জালালুদ্দিন হাক্কানি প্রথম হাক্কানি নেটওয়ার্ক গঠন করেন।

ওই সময় জালালুদ্দিন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর মূল্যবান সম্পদ। পাকিস্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ সোভিয়েতবিরোধী এই মুজাহিদীনদের অস্ত্র ও অর্থসহায়তা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত মুজাহিদীনদের প্রতিরোধের মুখে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য হলে একপর্যায়ে ওসামা বিন লাদেনের মতো বাইরের দেশের জিহাদিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন জালালুদ্দিন।

পরে তালেবানের সঙ্গে সখ্য হয় জালালুদ্দিনের। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালেবান বসলে মন্ত্রিত্ব পান তিনি।

রোগে ভুগে ২০১৮ সালে জালালুদ্দিনের মৃত্যুর খবর বিশ্বকে জানায় তালেবান।

জালালুদ্দিনের মৃত্যুর পর তার ছেলে সিরাজুদ্দিন হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান হন।

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলেই মূলত হাক্কানি নেটওয়ার্কের ঘাঁটি। তবে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমেও তাদের ঘাঁটি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

গত কয়েক বছরে তালেবানের নেতৃত্বে আগের চেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয় হাক্কানি নেটওয়ার্ক।

২০১৫ সালে তালেবানের উপনেতা হিসেবে নিয়োগ পান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি।

একসময় আফগান সরকারের হাতে বন্দি ও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সিরাজুদ্দিনের ছোট ভাই আনাস হাক্কানি গত সপ্তাহে কাবুল পতনের পর আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও ঘানি সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

জালালুদ্দিন হাক্কানি। ছবি: এএফপি

কেন আতঙ্কের নাম হাক্কানি নেটওয়ার্ক

গত দুই দশকে আফগানিস্তানে নির্মম কয়েকটি হামলায় হাক্কানি নেটওয়ার্ক জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে।

এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় রয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। এ ছাড়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রয়েছে সংগঠনটি।

কোনো জায়গায় হামলা করতে হলে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের ব্যবহার করে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। এসব হামলাকারী গাড়ি বা ট্রাকে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক দ্রব্য বোঝাই করে বিস্ফোরণ ঘটায়।

আফগানিস্তানে সেনাবাহিনীর স্থাপনা, দূতাবাসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান হাক্কানি নেটওয়ার্কের লক্ষ্যবস্তু।

২০১৩ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে হাক্কানি নেটওয়ার্কের একটি ট্রাক আটকায় আফগান সেনারা।

ওই ট্রাকে প্রায় ২৮ টন ওজনের বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল বলে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার।

হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যার অভিযোগও রয়েছে।

২০০৮ সালে তারা আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে গুপ্তহত্যার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে।

এ ছাড়া মুক্তিপণ ও বন্দি বিনিময়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাসহ পশ্চিমা দেশের নাগরিকদের অপহরণেরও অভিযোগ রয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাক্কানি নেটওয়ার্কের দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।

অবশ্য পাকিস্তান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

হাক্কানি নেটওয়ার্ককে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার ‘যথার্থ অস্ত্র’ হিসেবে ২০১১ সালে অভিহিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা অ্যাডমিরাল মাইক মুলেন। এই নেটওয়ার্ককে তালেবানের ‘যুদ্ধের জন্য সর্বদা প্রস্তুত বাহিনী’ হিসেবে জুনে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তালেবান ও আল-কায়েদার সম্পর্কের মাধ্যম হাক্কানিরা।

তালেবানের নতুন শাসনামলে হাক্কানি নেটওয়ার্কের ভূমিকা কী

গত সপ্তাহে কাবুল পতনের পর হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন আনাস হাক্কানি।

অন্যদিকে আনাসের চাচা খলিল হাক্কানিকে শুক্রবার কাবুলের এক মসজিদে জুমার নামাজের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।

সিরাজুদ্দিন ও খলিল উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী তালিকায় রয়েছেন। ওয়াশিংটন তাদের মাথার দর নির্ধারণ করেছে কয়েক লাখ ডলার।

তালেবানের এবারের রাজনৈতিক প্রকল্পে হাক্কানিরা যে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, তা কাবুলে একই সময়ে আনাস, সিরাজুদ্দিন ও খলিলের উপস্থিতিতে টের পাওয়া যাচ্ছে।

আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠনের আলোচনায় হাক্কানিদের অংশগ্রহণ সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর