বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তালেবানের এবারের শাসন কেমন হবে

  •    
  • ২২ আগস্ট, ২০২১ ১৮:০৯

দীর্ঘ দুই দশক ধরে তালেবান ভেবেছে, ফের ক্ষমতায় গেলে তারা কীভাবে দেশ শাসন করবে। আফগানিস্তানের শাসনব্যবস্থা কেমন হতে যাচ্ছে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে পুরো বিশ্ব।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল গত রোববার তালেবান ঘিরে ফেলার একপর্যায়ে দেশবাসীকে কিছু না জানিয়ে পালিয়ে যান আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি।

ঘানির পলায়নের খবর জানাজানি হওয়ার পর কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্যালেসে কোনো বাধা ছাড়াই একে-৪৭ রাইফেল হাতে ঢোকে আফগান যোদ্ধারা।

প্রেসিডেন্ট প্যালেসের কয়েক মাইল দূরে ওই সময় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শত শত আফগান নাগরিক জড়ো হয়েছে। তারা সবাই দেশ ছাড়তে উন্মুখ।

বিদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরাতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। চারদিকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।

বিদেশি সামরিক বিমানে উঠতে মরিয়া বিপুলসংখ্যক আফগান। তাদের সরাতে ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়। মানুষজনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিলও করা হয়।

রোববার কাবুলে প্রবেশের আগে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছিল তালেবান।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রসঙ্গ টেনে আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই সে সময় টুইটবার্তায় জানান, দেশের শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ড. আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ও সাবেক মুজাহিদীন নেতা গুলবুদ্দিন হিকমতিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বয় পরিষদ গঠন করা হচ্ছে।

অবশ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট কারজাইয়ের বক্তব্য খুব একটা আমলে নেয়নি তালেবান। রাষ্ট্রক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে তারা।

বিদায়ী আফগান সরকারের সঙ্গে যতটুকু কথা তালেবান নেতারা বলবেন, তা আন্তর্জাতিক সহায়তা অব্যাহত রাখার স্বার্থেই। এর বেশি কিছু নয়।

দি ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো ধরনের লড়াই ছাড়াই ক্ষমতা হস্তান্তর হচ্ছে দেখে কাবুলের অনেক নাগরিক কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।

১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কাবুল দখল নিয়ে ২৫ হাজারের বেশি আফগান নাগরিকের মৃত্যু হয়।

তালেবান আগের মতো নেই, তাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে- সংগঠনটির নেতাদের এসব বক্তব্য শুরুতে কিছু মানুষ বিশ্বাস করে। তাদের বিশ্বাসে খুব দ্রুতই আঘাত হানতে সক্ষম হয় তালেবান।

ক্ষমতায় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বসেনি তালেবান। তবে কয়েকটি প্রদেশে নারীদের কর্মস্থলে যেতে নিষেধ করেছে সংগঠনটি।

নিজেদের যোদ্ধাদের সঙ্গে মেয়েদের বিয়ে দিতে বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত পরিবারগুলোকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাইম বলেন, যুদ্ধ শেষ হয়েছে। তালেবান বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে চায় না। এবারের শাসনকাঠামো শিগগিরই সবাইকে জানানো হবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কেরও আহ্বান জানান তিনি।

তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও উপনেতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদর বলেন, ‘এবারের যুদ্ধে আমরা জয়ী হব, এমন আশা ছিল না।

‘দেশকে আমরা কীভাবে সেবা করতে পারি, তাতেই এখন জোর দেয়া হবে।

‘আমরা আশ্বস্ত করে বলতে চাই, দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।’

তালেবানের প্রধান নেতা এ মুহূর্তে হিবাতুল্লাহ আখুনজাদা হলেও দেশের ক্ষমতা গ্রহণের পর মোল্লা বারাদরই জনসমক্ষে বেশি হাজির হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আফগানিস্তান দখলের মিশন তালেবানের শেষ।

পাকিস্তানে লুকিয়ে থাকা সংগঠনটির অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতাকে এখন আফগান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে। তাদের মধ্যে সিরাজুদ্দিন হাক্কানি, প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব উল্লেখযোগ্য।

আফগান সরকারের মন্ত্রীদের বিষয়ে বেলজিয়ামভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সদস্য অ্যান্ডরু ওয়াটকিন্স বলেন, ‘তালেবানের মধ্যে কি সরকারের কার্যক্রম চালানোর মতো জনবল রয়েছে, নাকি তারা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান কর্মকর্তাদের আপৎকালীন সময়ে কাজ চালিয়ে নিতে বলবে?’

এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি তালেবান। তাদের নিয়ে পশ্চিমা দেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। তারা তালেবান সরকারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে চায় না।

তবে মানবিক সহায়তার মাধ্যমে আফগানিস্তানের নতুন শাসকের কাছ থেকে যৌক্তিক ব্যবহার পেতে আগ্রহী কয়েকটি দেশ।

আফগানিস্তানের পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তালেবানের জয়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে মানসিক দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙেছে তালেবান।’

অন্যরা পাকিস্তানের মতো অতটা উচ্ছ্বসিত নয়।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘তালেবানকে দ্বিপক্ষীয়ভাবে কেউ স্বীকৃতি দিক, তা আমরা চাই না।

‘সন্ত্রাসবাদ, মানবাধিকারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তালেবান শর্ত মানলে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয় ভাবা যেতে পারে।’

তালেবানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তান শাসনের নতুন মডেল হাজির করা হবে।

তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের নতুন সরকারকাঠামো পশ্চিমা গণতন্ত্রের আদলে হবে না। তবে এটি সবার অধিকার রক্ষা করবে।’

দীর্ঘ দুই দশক ধরে তালেবান ভেবেছে, ফের ক্ষমতায় গেলে তারা কীভাবে দেশ শাসন করবে।

আফগানিস্তানের শাসনব্যবস্থা কেমন হতে যাচ্ছে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে পুরো বিশ্ব।

এ বিভাগের আরো খবর