তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। তাদের প্রতিরোধের মুখে বাঘলান প্রদেশের তিনটি এলাকা থেকে পালিয়েছে কট্টর ইসলামপন্থি সংগঠনটির যোদ্ধারা।
বাঘলানের এলাকা তিনটি পুল-ই-হাসের, বানু ও দেহ সালাহ। এলাকা তিনটি থেকে তালেবান যোদ্ধাদের হটানোর সময় উভয় পক্ষে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর।
আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের ৩৩টি এবং রাজধানী কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর এই প্রথম বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধের খবর এলো। অবশ্য এ বিষয়ে তালেবান থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি।
বানুর সাবেক পুলিশপ্রধান আসাদুল্লাহ বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা ও মুজাহিদীনদের সহায়তায় তিনটি এলাকা স্বাধীন করা হয়েছে। আমরা এখন খিনজান এলাকার দিকে এগোচ্ছি। দ্রুতই বাঘলান প্রদেশ মুক্ত করা হবে।’
বাঘলান প্রদেশের হাইওয়ে পুলিশের সাবেক কমান্ডার গনি আন্দারাবি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমরা তালেবানের অনেক হতাহত করতে পেরেছি। বর্তমানে বানু এলাকা গড়ে ওঠা স্থানীয় বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে।’
একাধিক সূত্র বলেছে, বাঘলানে প্রবেশের পরপরই তালেবান যোদ্ধারা দুয়ারে দুয়ারে তল্লাশি চালাচ্ছিল। এতে প্রতিরোধে ফেটে পড়ে স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে তালেবান থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না এলেও হারানো এলাকা তিনটি পুনরুদ্ধারে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে।
একের পর এক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর গত রোববার রাজধানী কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলে নিয়ে আফগানিস্তানের সবকিছু করায়ত্ত করে তালেবান। দুই দশক পর দেশটিতে সরকার গঠন করা তাদের জন্য কেবল সময়ের ব্যাপার।
অবশ্য তালেবান থেকে বলা হচ্ছে, আগের কট্টর অবস্থান থেকে সরে এসেছে তারা। সবাইকে ক্ষমার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে নারী অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি নারীদের উচ্চ শিক্ষা এবং চাকরি ক্ষেত্রেও কোনো বাধা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে তালেবান। বলা হচ্ছে ‘এই তালেবান সেই তালেবান নয়’।
তালেবানের এসব প্রতিশ্রুতিতে বাস্তবের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। বরং তারা বিরোধীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি শুরু করেছে। গজনি প্রদেশে হাজারা সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।
এসব ঘটনায় আফগানিস্তানের জায়গায় জায়গায় তালেবান প্রতিরোধী হয়ে উঠছে সাধারণ জনতা। প্রতিরোধ গড়তে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্ত্র চেয়েছেন বহুল পরিচিত এক প্রয়াত যোদ্ধার ছেলে।
আর পালিয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির ডেপুটি, অর্থাৎ ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ অজ্ঞাত স্থান থেকে এক বার্তায় দিয়েছেন প্রতিরোধের ডাক। বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পালিয়ে যাওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী তিনিই এখন প্রেসিডেন্ট।
সালেহ অজ্ঞাত স্থান থেকে বার্তা দেন সোমবার। আর বুধবারই তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ দেখা গেছে দেশটির জালালাবাদ শহরে। এই শহরটিও যুদ্ধ ছাড়া তুলে দেয়া হয়েছিল। আর সেই শহরের বাসিন্দারাই তালেবানের তোলা পতাকা নামিয়ে নিজ দেশের পতাকা উড়িয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার দেশটির স্বাধীনতা দিবসেও দেখা গেল একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি। জালালাবাদের আসাদাবাদ ছাড়াও বিক্ষোভ হয়েছে অন্তত পাঁচটি শহরে। বাদ যায়নি রাজধানী কাবুলও। এখানেও তালেবানের সরাসরি গুলি। আর্তনাদ, প্রাণহানি।