করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সচেতনতা বাড়াতে এবার কলকাতার অনেক মণ্ডপে দেবী দুর্গার মুখে থাকবে মাস্ক। অস্ত্রশস্ত্রের পরিবর্তে দেবীর হাতে থাকবে থার্মাল গান, স্যানিটাইজার, পালস অক্সিমিটার, গ্লাভস ইত্যাদি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দাপটে গোটা দেশ নাজেহাল। দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। গৃহবন্দি লাখ লাখ মানুষ কাজ হারিয়ে দিশেহারা। তবুও একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে করোনা বিধিনিষেধে মাস্ক পরার ব্যাপারে চূড়ান্ত অনীহা দূর হচ্ছে না।
তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণে মানুষের মধ্যে বিধিনিষেধের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবার দেবী দুর্গাকে মাস্ক পরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলকাতার বিভিন্ন পূজা কমিটি। যদিও অনেক পূজা কমিটি মা দুর্গাকে মাস্ক পরানোর পক্ষপাতী নন।
অক্টোবরে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের মাঝে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবে জীবন-জীবিকা নিয়ে বহু মানুষ জড়িয়ে থাকবেন। তাই সাবধানতার বার্তা দিতে কলকাতার বাগুইয়াটির অশ্বিনীনগরের বন্ধুমহল ক্লাব এবার মায়ের হাতে অস্ত্রশস্ত্রের বদলে, থার্মাল গান, পালস অক্সিমিটার, স্যানিটাইজার আর মুখে সোনার মাস্ক পরে আগমন হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কমিটির কর্তারা।
পূজা কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা তৃণমূল বিধায়ক, গায়িকা অদিতি মুন্সি দুর্গা প্রতিমার মাস্ক পরানোর প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেকে হয়তো বলবেন প্রতিমাকে সোনার মাস্ক কেন দেয়া হচ্ছে? আমরা সোনার মাস্ক প্রতীকী হিসেবে তুলে ধরছি। মেয়েদের সোনার মেয়ে, সোনার মা এভাবেই ডাকা হয়। আজ যদি কোন জ্যোতিষী বলেন, আপনাদের মাস্ক পরলে এবছর সৌভাগ্য আসবে, তাহলে পরতেন। তাহলে সুরক্ষার জন্য মাস্ক নয় কেন? সকলকে অনুরোধ করবো মাস্ক পরে থাকতে।’
উত্তর কলকাতার গৌরিবাড়ি সর্বজনীন দূর্গোৎসব কমিটি দুর্গার প্রতিমার মুখে একটি রূপার মাস্ক পরাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা বলেন, ‘এ বছর আমাদের ৮৭তম দুর্গাপূজা। এই মুহূর্তে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেকেই এখনও উদাসীন। দেবী দুর্গার মুখে মাস্ক দেখে, যদি তারা সচেতন হন, হুঁশ ফেরে। তাই এই উদ্যোগ।’
শিয়ালদার দত্ত বাড়ির পূজাতে এবার প্রতিমার মুখে মাস্ক থাকবে। রীতি মেনে অন্য গয়নার মতো বর্ধমানের এক স্বর্ণকারকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানালেন বাড়ির সদস্য দিশা দত্ত। কলেজ পড়ুয়া দিশার কথায়, ‘আমাদের ১৬০ বছরের এই পুজো। মাস্ক নিয়ে সবাই রাজি থাকলেও ৭২ বছরের ঠাকুমা প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না। শেষে বাবা অনেক বুঝিয়ে রাজি করান। সামনে মাসে প্রতিমার মাস্ক চলে আসবে।’
মানুষকে সচেতন করতে দুর্গাপুজোর থেকে বড় মঞ্চ আর হয় না। প্রতিমাকে মাস্ক পরানো গেলে, দর্শনার্থীদের কাছে দারুণ বার্তা দেয়া যাবে বলে অনেকে মনে করলেও পাশাপাশি ভিন্ন মতও রয়েছে।
শোভাবাজার নন্দন বাড়ির সেবায়েতের কথায়, ‘প্রতিমা কি মানুষের মতো হাঁটে? যদি হাঁটত মাস্ক পরাতাম। একশো কুড়ি বছরের পুজোয় অনিয়ম করা যাবে না।’
প্রতিমার মুখে মাস্ক পরানোয় আপত্তি আছে দেশপ্রিয় পার্ক সর্বজনীন, বাগবাজার সর্বজনীন এবং অন্যান্য অনেক বারোয়ারী দূর্গা পূজা কমিটির।
এব্যাপারে তৃণমূল বিধায়ক দেবাশীষ কুমারের যুক্তি, ‘আসলে কেউ দুর্গাকে সর্বশক্তিমান হিসেবে পুজো করেন। কেউ মেয়ের মতো পুজো করেন। মেয়ে হিসেবে ভাবলে, তাকে করোনা থেকে দূরে রাখতে যেকোনো অভিভাবকই মাস্ক পরাতে চাইবেন।’
কলকাতা একডালিয়া এভারগ্রিন পুজো কমিটির উদ্যোক্তা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘কোনো দুর্ঘটনা, মহামারির ছাপ আমরা প্রতিমার মুখে রাখার পক্ষপাতী নই। তাই মাস্ক পরানোর প্রশ্নই আসে না।’
অনেক পুজো কমিটির উদ্যোগক্তা অবশ্য বলছেন, বহু পুজো কমিটি এবার অভিনব কায়দায় করোনাসুর বধে প্রতিমার মুখে মাস্ক বা গ্লাভস ব্যবহার করে চমক দিতে পারে। থিমের মতো এ ব্যাপারটিও গোপন রাখা হচ্ছে।