আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা নেয়ার পর থেকেই আশ্বস্ত করে চলেছে প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠবে না তারা, স্বাধীনতা দেয়া হবে নারীদের। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এ আশ্বাস বাস্তবায়নের ইচ্ছা তাদের নেই।
এরই মধ্যে জানা গেছে, ন্যাটো বাহিনীকে সহায়তাকারীদের খুঁজে পেতে ঘরে ঘরে তল্লাসি চালাচ্ছে তালেবান। সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হাজারা অধ্যূষিত একটি গ্রামে গিয়ে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে।
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শুধু এই অভিযোগ করেই ক্ষান্ত হয়নি। এর স্বপক্ষে বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণও হাজির করেছে।
গজনি প্রদেশে এই ঘটনা ঘটে জুলাই মাসের গোড়ার দিকে। অ্যামনেস্টি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ৪-৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রদেশের মালিস্তান জেলার ৯জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে তালেবান।
গ্রামবাসীর বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি জানায়, তালেবানের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর লড়াই তীব্র হলে জান বাঁচাতে তারা দুর্গম পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। কয়েকদিন পর খাবার সংগ্রহ করতে কয়েকজন গ্রামে ফিরলে তাদের হত্যা করে তালেবান। তারা গ্রামের দখল নিয়ে বাড়িঘর লুটের পর গ্রামবাসীর ফেরার অপেক্ষায় সেখানেই অবস্থান করছিল।
ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করে তালেবান। বাকি তিনজনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান মতে, এক ব্যক্তিকে তার গায়ের চাদর দিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। তার হাত কেটে ফলা হয়।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তারা তালেবান সদস্যদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এই নৃশংসতার কারণ কী। এর জবাবে তালেবান সদস্যরা জানান, যুদ্ধ চলছে। এখন সবই বৈধ। সবাইকে মরতে হবে। মৃত্যু গুলি খেয়ে হয়েছে না অন্যভাবে তাতে কিছু আসে যায় না।
অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, ‘ঠান্ডা মাথায় করা এই খুনগুলো তালেবানের অতীতের কথাই মনে করিয়ে দেয়। আগামীতে তালেবানি শাসন কেমন হবে সে সম্পর্কেও ভীতি তৈরি করে।’
‘এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, সংখ্যালঘু জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠী তালেবান শাসনামলে তীব্র ঝুঁকির মুখে রয়েছে।’
তালেবান এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের দখল করার এলাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে তালেবানের দখলকৃত এলাকাগুলোর পরিস্থিতি জানা কঠিন হয়ে উঠেছে।
হাজারা সম্প্রদায়ের ওপর তালেবানের এই নৃশংস ঘটনার তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
হাজারা আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী। এরা চেঙ্গিস খান এবং তার সেনাদের বংশধর। সুন্নিপ্রধান আফগানিস্তানে শিয়া বিশ্বাসের চর্চাকারী এই গোষ্ঠীর মানুষ নির্যাতিত দীর্ঘ দিন ধরেই। তালেবানের আগের আমলেও তাদের পরিস্থিতি অভিন্ন কিছু ছিল না।