গত পাঁচ দিনে কাবুল বিমানবন্দর হয়ে আফগানিস্তান ছেড়েছে নাগরিক ও বিদেশি কূটনীতিকসহ ১৮ হাজারের বেশি মানুষ।
আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান গত রোববার রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটি ছেড়ে যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাটোর এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক ফ্লাইটে দেশ ছেড়েছেন সবাই। চলমান পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ কাবুল থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল শুরু হবে, তা এখনও অজানা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, এখনও পরিবার-পরিজন নিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষা করছে হাজারো মানুষ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কাবুল শহরের অবস্থা থমথমে। বিমানবন্দরের ভেতর ও বাইরে নানা পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ন্যাটো ও তালেবান কর্মকর্তারা।
যারা আফগানিস্তান ছেড়েছেন, তাদের মধ্যে কতজন আফগান ও কতজন বিদেশি, সে বিষয়টিও অস্পষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রয়টার্সের আলাদা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাবুল বিমানবন্দর থেকে এ পর্যন্ত ছয় হাজার ৭৪১ জনকে ফিরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদের মধ্যে আমেরিকান নাগরিক ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা এক হাজার ৭৯২ জন।
আরও ছয় হাজার মানুষকে আফগানিস্তান থেকে বের করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিরাপদে কাবুল ত্যাগ নিশ্চিতে শহরের আকাশজুড়ে টহল দিচ্ছে আমেরিকান যুদ্ধবিমান।
তালেবান কাবুল দখলের পর তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে নিতে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ। তাদের সঙ্গে যেকোনোভাবে বিমানে উঠতে মরিয়া হাজারো আফগান পরিবার।
একজন আমেরিকানও আফগান ভূখণ্ডে থাকবে না বলে বুধবার এক ঘোষণায় বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তিনি জানান, সব নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনতে ৩১ আগস্টের পরও আফগানিস্তানে অবস্থান করতে হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের।
নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছয় হাজার সেনাকে স্বল্প সময়ের জন্য চলতি সপ্তাহেই আফগানিস্তানে পাঠায় ওয়াশিংটন।
এদিকে বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে দেশ ছাড়ার সুযোগ খোঁজা ভীত-সন্ত্রস্ত আফগানদের ঠেকাতে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়েছে তালেবান।
বিমানবন্দরগামী বেসামরিক আফগানদের বেধড়ক পেটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো।
তালেবানের পক্ষ থেকে পুরোনো শত্রু বা ভিন্ন মতাদর্শীদের ওপর প্রতিশোধ না নেয়ার আশ্বাস দেয়া হলেও তাতে স্বস্তি পায়নি আফগান জনতার বড় অংশ। বিশেষ করে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের সেনাদের সহযোগিতা করা আফগানরা আছেন সবচেয়ে ভয়ে।
আশ্বাসের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এরই মধ্যে তালিকা ধরে বিরোধী মতাদর্শীদের সন্ধানে বাড়িতে বাড়িতে তালেবান যোদ্ধারা তল্লাশি শুরু করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
যাদের খোঁজ করা হচ্ছে, তারা নিজেরা আত্মসমর্পণ না করলে তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও শাস্তির হুমকি দিয়েছে তালেবান।
তালেবানের কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা মারাত্মক বিপদের মুখে আছে জানিয়ে তাদের গণমৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে জাতিসংঘের গোপন নথিতে।