ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের শাসনব্যবস্থা নির্ধারণে চলতি সপ্তাহে আলোচনায় বসবে তালেবান। তবে দেশ পরিচালনায় গণতন্ত্রের কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে গোষ্ঠীটি।
নারীরা শিক্ষাগ্রহণ করবেন কি না, কী ধরনের পোশাক পরবেন, সেসব সিদ্ধান্ত নেবেন ওলামারা (ধর্মীয় শিক্ষাবিদ)।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি জানিয়েছেন এসব কথা।
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিকব্যবস্থার ছিটেফোঁটাও থাকবে না শাসনব্যবস্থায়। কারণ আমাদের দেশে এর কোনো ভিত্তিই নেই।
‘আফগানিস্তানে কী ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা দাঁড় করানো হবে, তা নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। কারণ এটা স্পষ্ট। শরিয়াহ আইন অনুযায়ী দেশ চলবে। কথা শেষ।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের বেসামরিক সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনায় পরিষদ গঠন করতে পারে ধর্মভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান।
সম্ভাব্য তালেবান পরিষদের অধীনে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন প্রেসিডেন্ট। তার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে থাকতে পারে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার পৃথক পদ।
এ হিসেবে তালেবানশাসিত আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হতে পারেন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুনজাদা।
হাশিমি বলেন, ‘পরিষদের প্রধানের পদ হবে দেশের প্রেসিডেন্ট পদের সমকক্ষ। আখুনজাদার পদমর্যাদা তার চেয়েও ওপরে থাকবে। হয়তো আখুনজাদার উপপ্রধান থাকবেন প্রেসিডেন্ট।’
হাশিমির দাঁড় করানো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তালেবানের সম্ভাব্য কাঠামো থেকে আভাস মিলছে যে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে কায়দায় তালেবান দেশ শাসন করেছিল, তার সঙ্গে মিল থাকবে নতুন সরকারের।
নব্বইয়ের দশকের শাসনামলের মতো নারীদের প্রতি তালেবানের আচরণ একই থাকবে বলে যে ভীতি ঘনিয়ে উঠেছে, তা কাটাতেও কোনো রকম নমনীয়তা দেখাননি হাশিমি।
তিনি বলেন, ‘মেয়ে শিশু-কিশোরীদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের ওলামারা।
‘নারীরা হিজাব বা বোরকা পরলেই হবে, নাকি মুখ-চোখ ঢাকা পরিপূর্ণ পর্দা বা আবায়াজাতীয় কিছু পরবেন, সে সিদ্ধান্তও ওলামাদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে।’
যদিও এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে নারী অধিকার নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছিল তালেবান।
হাশিমি জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সশস্ত্র বাহিনীগুলোর সদস্য ও বৈমানিকদের নিজ নিজ দায়িত্বে ফেরার আহ্বান জানাবে তালেবান। যদিও সে প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
গত ২০ বছরে তালেবান যোদ্ধাদের হামলায় হাজারো আফগান সেনা নিহত হয়েছে। বিশেষ করে তালেবানবিরোধী অভিযানে ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আফগান বৈমানিকরা গোষ্ঠীটির সাম্প্রতিক আগ্রাসনেরও লক্ষ্য ছিলেন।