বিরোধী ও ভিন্ন মতের সবাইকে ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবান।
গোটা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দুই দিন পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে এসে এ ঘোষণা দেন তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদিন।
সংবাদ সম্মেলনে জাবিহুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি। দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’
কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি কাবুলসহ গোটা দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর বিভিন্ন বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে যারা কাজ করতেন তারা শাস্তি এড়াতে দেশ থেকে পালানোর প্রাণপন চেষ্টা শুরু করেন। এমন প্রেক্ষাপটে প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই সবাইকে ক্ষমা করার ঘোষণা দিলেন তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ।
যারা বিদেশি বাহিনীর হয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছেন অথবা অনুবাদক হিসেবে কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে- জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যারা বিদেশি বাহিনীর সহায়ক হিসেবে কাজ করেছিলেন তাদের কেউ প্রতিহিংসার শিকার হবেন না। যেসব তরুণ এই মাটিতে জন্মেছেন, আমরা চাইব না তারা দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাক। তারা আমাদের সম্পদ।’
তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ আশ্বস্ত করে বলেন, কেন তারা বিদেশি শক্তির সঙ্গে কাজ করেছিলেন সে বিষয়ে কোনো জবাবদিহি করতে হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, শরিয়াহ আইন অনুযায়ী নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
‘আফগান নারীরা কোন সহিংসতার শিকার হবেন না।’ যোগ করেন জাবিহুল্লাহ। আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করে তিনি জানান, নারীর অধিকার ইস্যুতে তাদের শঙ্কিত হবার কিছু নেই। তবে এসময় এই মুখপাত্র আহ্বান জানান, বিশ্ব সম্প্রদায়গুলোকেও নারীর অধিকার নিশ্চিতে তালেবানের প্রধান মূল্যবোধগুলোর প্রতিও সম্মান দেখাতে হবে।
এর আগে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আফগানিস্তানের নতুন সরকার গঠনে নারীদের অংশগ্রহণ করতে মঙ্গলবার আহ্বান জানায় তালেবান।
এ পদক্ষেপকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। কেননা, তালেবান ক্ষমতা দখলের পর নারীদের ওপর পীড়ন শুরু করবে, এ ধরনের আশঙ্কা রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। আগের শাসনামলেও কট্টর ধর্মীয় গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানের নারীদের ওপর শরিয়া আইন চাপিয়ে দিয়েছিল।
তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য এনামুল্লাহ সামানগানি বলেন, ‘তালেবান নারীদের ভোগান্তির কারণ হতে চায় না। শরিয়াহ আইন অনুযায়ী তাদের সরকারকাঠামোয় থাকা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের সরকারকাঠামো এখনও পরিষ্কার নয়। তবে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সবার অংশগ্রহণে পুরোপুরি ইসলামি নেতৃত্বেই দেশ পরিচালনা করা হবে।’
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, মঙ্গলবার তালেবানের জ্যেষ্ঠ নেতা আব্দুল হক হাম্মাদ আফগানিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজে কর্মরত নারী এক সংবাদ পাঠকের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
একে নারীর প্রতি তালেবানের কিছুটা নমনীয় মনোভাব হিসেবে দেখছেন অনেকে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের শাসনামলে আফগান নারীদের একা ঘরের বাইরে বের হওয়ার অনুমতি ছিল না। স্কুলে পড়াও ছিল বারণ।
২০ বছর পর আবার তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সারা বিশ্ব। কিন্তু কেন? বিষয়টি উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনপিআরের একটি প্রতিবেদনে।
যে কায়দায় গত ১০ দিনে রাজধানী কাবুলসহ বিভিন্ন প্রদেশ দখল করেছে তালেবান, তাতে স্পষ্ট যে, ২০ বছর আগের আর বর্তমানের তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য খুব একটা নেই।
অতীতে নারীদের শিক্ষাগ্রহণের অধিকার প্রত্যাখ্যান, বিরোধী মতাদর্শীদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, শিয়া হাজারাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও বামিয়ানে অমূল্য প্রাচীন পাথুরে বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করে দেয়াসহ নানা কারণে সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল তালেবান।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হোসেন হাক্কানির মতে, এবারও যে তালেবান মানবিক মূল্যবোধের প্রশ্নে নতুন করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের চক্ষুশূল হবে না, তা ভাবার কোনো কারণ নেই।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারসহ কয়েকটি জায়গায় সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ যায় হাজারো মানুষের। হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরে আফগানিস্তানের তৎকালীন শাসক দল তালেবানকে অনুরোধ করেছিল ওয়াশিংটন।
বিন লাদেন আফগানিস্তানে আত্মগোপনে বলে দাবি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের বুশ সরকার। যদিও পরবর্তীতে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সেনা অভিযানে বিন লাদেন নিহত হন পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়।
দীর্ঘদিন ধরেই তালেবান, আল কায়েদাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে।