আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সরকার পতনের মুখে পড়েছে। দেশটির ক্ষমতা অল্প সময়ের মধ্যেই হারাতে পারেন ঘানি সরকার।
দেশটির বেশিরভাগ এলাকা দখলে নেয়ার পর এবার তালেবান যোদ্ধারা কাবুল দখলে নিতে শুরু করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সামনে দুটি পথ খোলা আছে, একটি তালেবানের কাছে আত্মসমর্পন অথবা রাজধানী কাবুল বাঁচাতে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করা।
তালেবান কাবুল দখল নিতে শুরু করার পর থেকে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির ওপর আত্মসমর্পণের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। এক রাতের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় প্রাণহানি এড়াতে ঘানির ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে বেশ কয়েকটি দেশ।
সেনা প্রত্যাহারের পর বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশরাফ ঘানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, রক্তপাত এড়িয়ে একটি রানৈতিক সমাধানের পথে আসতে।
ঘানি শনিবার অল্প সময়ের জন্য জনসম্মুখে এসে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর অসীম সাহসিকতার প্রসংশা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি সাধারন মানুষের নিরাপত্তা ও তার লোকদের সহিংসতা থেকে বাঁচানোর জন্য কাজ করছেন বলে জানান।
ভাষণের আগে জল্পনা ছিল আশরাফ ঘানি পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন। তবে সেটা হয়নি।
কাবুল নিরাপদ!
রাজধানী কাবুল এখনও নিরাপদ বলে এক টুইট করেছেন আফগান সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা। মার্টিন বেক নামের ওই কর্মকর্তা টুইটে বলেন, 'আতঙ্কিত হবেন না। কাবুল নিরাপদ আছে।'
ব্যাংকে ভিড়, সরকারি অফিস খালি
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, কাবুলে রাস্তায় ও বাজারে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর সামনে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এগুলোর বেশ কিছু ছবিও ছড়িয়েছে। সেগুলোতে জনসাধারণকে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অফিসে ভিড় করতে দেখা গেছে।
ভিড় আছে বিদেশি দূতাবাস, ভিসা পক্রিয়াকরণ অফিসগুলোতে।
কাবুলের বেশিরভাগ সরকারি অফিস ছুটি দিয়ে কর্মীদের নিরাপদে থাকার কথা বলা হয়েছে।
এরই মধ্যে তালেবান যোদ্ধারা দেশটির ৩৪টি প্রদেশের বেশিরভাগই দখল করে নিয়েছে। রাজধানী কাবুল দখল করতে চারদিকে থেকে এগিয়েছে তালেবান।
১০ দিন পেরোনোর আগেই আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে ২২টি দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। কান্দাহার, হেরাত, মাজার-ই-শরিফ, জালালাবাদসহ দেশের সবগুলো বড় শহর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর রাজধানী কাবুল জয় এখন সময়ের ব্যাপার হিসেবে বলছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
২০ বছর অবস্থানের পর চলতি বছরের মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর সেনারা আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করে। এরপর আগ্রাসী অভিযান চালিয়ে মাত্র তিন মাসে দেশের বড় অংশের দখল নিয়ে নেয় কট্টরপন্থি তালেবান।
সহিংসতায় গৃহহীন হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের লাখো মানুষ। অনেকেই নিরাপত্তার আশায় পৌঁছেছে রাজধানী কাবুলে; দিনরাত কাটাচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।
পশ্চিমা দেশগুলো দ্রুত তৎপরতায় আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে নাগরিকদের। বিদেশি সেনা প্রহরায় ভিড় বেড়েছে কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।