১০ দিন পেরোনোর আগেই আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে ২২টি দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। কান্দাহার, হেরাত, মাজার-ই-শরিফ, জালালাবাদসহ দেশের সবগুলো বড় শহর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর রাজধানী কাবুল জয়ের দ্বারপ্রান্তে গোষ্ঠীটি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, অবিশ্বাস্য দ্রুততায় দেশের বড় ও প্রধান অঞ্চলগুলোতে জয়ের জন্য আফগান জনতাকেই ধন্যবাদ জানিয়েছে তালেবান।
গোষ্ঠীটি স্থানীয় সময় শনিবার রাতে দেয়া এক বিবৃতিতে বলে, দ্রুততম সময়ে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয়েছে যে আফগান জনসাধারণের কাছে গোষ্ঠীটি বরাবরই গ্রহণযোগ্য।
আফগান নাগরিক ও বিদেশিদের সুরক্ষা নিশ্চিতেরও আশ্বাস দিয়েছে তালেবান।
বিবৃতিতে নিজেদের ‘ইসলামিক আমিরাত’ ঘোষণা করে তালেবান লেখে, ‘সব সময়ের মতোই ভবিষ্যতেও সাধারণ জনতার জান-মাল ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে কাজ অব্যাহত থাকবে। প্রিয় জাতির জন্য শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলা হবে।’
বিদেশি কূটনীতিক ও সাহায্য কর্মীরাও নিরাপদে থাকবেন বলে আশ্বাস দেয় গোষ্ঠীটি।
২০ বছরের সামরিক অবস্থানে ইতি টানতে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটো চলতি বছরের মে মাসে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। এরপর মাত্র তিন মাসে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবান।
আফগান সেনা বা সরকার সমর্থিত মিলিশিয়াদের কাছ থেকে কোনো ধরনের প্রতিরোধ বা সংঘাত-সহিংসতা ছাড়াই বড় শহরগুলো দখল হয়েছে।
সবশেষ স্থানীয় সময় রোববার সকালে পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশের রাজধানী জালালাবাদের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান।
সেখানকার এক আফগান কর্মকর্তা জানান, গভর্নর আত্মসমর্পণ করায় শহরে কোনো সংঘাত-সহিংসতা হয়নি।
তিনি বলেন, ‘বেসামরিক বাসিন্দাদের বাঁচাতে তালেবানকে স্বেচ্ছায় শহরে ঢুকতে দেয়াই একমাত্র পথ ছিল।’
এর আগে একইভাবে উত্তরাঞ্চলীয় বালখ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরিফ দখলেও কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়নি গোষ্ঠীটিকে।
বালখের আইনপ্রণেতা আবাস ইব্রাহিমজাদা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, প্রথমে আফগান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে তালেবানের কাছে। তাদের অনুসরণ করে সরকার সমর্থিত বাহিনীগুলো। এরপর আত্মসমর্পণে আর দেরি করেনি অন্যান্য মিলিশিয়ারাও।
মাজার-ই-শরিফে তালেবানবিরোধী রণাঙ্গণের দুই নেতা উজবেক আদিবাসীদের প্রধান আব্দুল রশিদ দোস্তুম ও তাজিক আদিবাসীদের প্রধান আত্তা মোহাম্মদ নূর প্রদেশটি ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ফেসবুকে দেয়া পোস্টে শনিবার নূর পরাজয়ের জন্য সরকারি বাহিনীকে দায়ী করেন। তিনি এবং দোস্তুম নিরাপদে আছেন জানিয়ে লেখেন, আফগান বাহিনী নিজেদের সব অস্ত্র ও সরঞ্জাম তালেবানের কাছে হস্তান্তর করেছে।
অথচ দিন দুয়েক আগেই অঞ্চলটিতে সফর করেছিলেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে প্রভাবশালী দুই নেতার সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন তিনি।