বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘তালেবানের কাছে আমাদের বিক্রি করে দিয়েছে সরকার’

  •    
  • ১৪ আগস্ট, ২০২১ ১৫:৩৩

কাবুলসহ অন্য শহরগুলোর রাস্তাঘাটে দেখা মিলছে প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়ে সীমান্তের দিকে যেতে থাকা হাজার হাজার আফগানের। অথচ তিন মাস ধরে আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তালেবান দখল করে নিচ্ছে বলে খবর এলেও অনেকেই তা বিশ্বাস করেনি। কান্দাহার ও হেরাতের পরপর পতনে কেটেছে সে অবিশ্বাস।

কী দ্রুততায় দেশের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে তালেবান, চোখের সামনে দেখেও তা বিশ্বাস করতে পারছে না সাধারণ আফগানরা।

কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে একই দিনে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহৎ শহর কান্দাহার আর হেরাত দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ শহর দক্ষিণের কান্দাহারের বাসিন্দা এক নারী বলেন, ‘আক্ষরিক অর্থেই আমাদের তালেবানের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। সরকারের দিক থেকে কোনো রকম প্রতিরোধের মুখেই পড়তে হয়নি তালেবানকে।

‘আমি কোনো দিন কল্পনাও করিনি যে কান্দাহার দখল করা এত সহজ হতে পারে।’

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানের আক্রমণে আফগান সরকার একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী আর জেলার পর জেলার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। এতে দেশটির সাধারণ মানুষের চোখে-মুখে অবিশ্বাস আর ক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট।

পশ্চিমের হেরাত শহরে তালেবানবিরোধী মিলিশিয়া গোষ্ঠীর এক সদস্য বলেন, ‘বাস্তবতা হলো তালেবানের কাছে এসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর কাবুল আর মাজার-ই-শরিফেরও একই পরিণতি হবে।’

বড় ও প্রধান শহরগুলোর মধ্যে আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে শুধু কাবুল আর মাজার-ই-শরিফ।

৬ আগস্ট থেকে শনিবার পর্যন্ত ৯ দিনে ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে ১৮টির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। সবশেষ লোগার প্রদেশের রাজধানী পুলি-ই-আলিম শহর দখলের মধ্য দিয়ে রাজধানী কাবুলের ৮০ কিলোমিটার দূরত্ব পৌঁছে গেছে যোদ্ধারা।

যদিও গত এক সপ্তাহে আফগান সরকারের কোনো কর্মকর্তা কিংবা প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি তালেবানের প্রাদেশিক রাজধানী দখল প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি।

যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটো চলতি বছরের মে মাসে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। তখন থেকে আগ্রাসী অভিযান শুরু তালেবানের। দেশের সোয়া চার শ জেলার দুই-তৃতীয়াংশ দখলের দাবি করেছে গোষ্ঠীটি।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, আফগানিস্তানে সহিংসতায় এ পর্যন্ত আড়াই লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গত এক মাসে প্রাণ গেছে এক হাজারের বেশি বেসামরিক আফগানের।

রাজধানী ছেড়ে পালানোদের মধ্যে ৭২ হাজার শিশু আছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন।

সহিংস পরিস্থিতির কারণে খাদ্য, ওষুধসহ জরুরি ত্রাণ সরবরাহ ঝুলে আছে এবং হাসপাতাল, ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশগুলোকে সীমান্ত খোলা রাখতে এবং প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে যাওয়া আফগানদের প্রবেশ করতে দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এক দিন আগেই অবশ্য আফগান শরণার্থীদের জন্য চামান সীমান্ত খুলে দিয়েছে পাকিস্তান। এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক আফগান আর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আশ্রয় নিয়েছে তাজিকিস্তানে।

কাবুলসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তাঘাটে দেখা মিলছে প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়ে বিভিন্ন সীমান্তের দিকে যেতে থাকা হাজার হাজার আফগান শরণার্থীর।

অথচ তিন মাস ধরে আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তালেবান দখল করে নিচ্ছে বলে খবর এলেও অনেকেই এসবে বিশ্বাস করেননি। কান্দাহার ও হেরাতের পরপর পতনে কেটেছে সে অবিশ্বাস।

বর্তমানে কাবুলে অবস্থানরত হেরাতের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি তো এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে সত্যিই এমন কিছু ঘটেছে।’

এমনকি তালেবানের নিয়ন্ত্রণে হেরাত আর কান্দাহারের প্রথম দিনেই শহরে গোষ্ঠীটিকে নিয়ে আগ্রহের শেষ ছিল না বাসিন্দাদের। শুক্রবার ভোরে অনেকেই ‘তালেবান দেখতে’ বের হয়েছিল বলে জানান এক বাসিন্দা।

অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিওতেও তালেবান যোদ্ধাদের এক নজর দেখতে ভিড় করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। বিদেশি সেনা অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া গোষ্ঠীটির দেখা গত ২০ বছরে মেলেনি বলেই এই কৌতূহল।

কান্দাহারে বিশোর্ধ্ব এক তরুণ জানান, আকাশে ফাঁকা গুলি ছুড়ে দিনভর বিজয় উদযাপন করেছে তালেবান সদস্যরা।

সাধারণ জনতাকে হয়রানি

স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, বিজয় উদযাপন খুব বেশি দীর্ঘ করেনি তালেবান যোদ্ধারা। দ্রুতই তারা বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি ও বেসামরিক বাসিন্দাদের হয়রানি করতে শুরু করে।

ওই সাংবাদিক বলেন, ‘বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে খোঁজখবর করেছে তারা। জানতে চেয়েছে আফগান সরকারের কর্মকর্তা বা কর্মচারী আর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজ।’

বর্তমানে আরেকটি শহরে আত্মগোপনে থাকা ওই সাংবাদিক আরও জানান, তার বাড়িতেও গিয়েছিল তালেবান যোদ্ধারা। ভেবেছিল যে সরকারি কোনো কর্মকর্তার বাড়ি সেটি।

কোনো বাড়িতে গাড়ি ও অস্ত্র পেলে সেগুলোও জব্দ করছে তালেবান সদস্যরা।

গোষ্ঠীটির এসব তৎপরতা ২০ বছর পেছনে তালেবানের পাঁচ বছরের শাসনামল মনে করিয়ে দিয়েছে অনেক আফগানকে।

কান্দাহারের এক তরুণ বলেন, ‘যে তালেবানকে সারা জীবন অভিশাপ দিয়ে এসেছি আমি, এটা সেই তালেবানই। একটুও বদলায়নি তারা।’

তালেবানের ক্রোধের শিকার হওয়ার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে না যাওয়া আরেক যুবক বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে যে গোষ্ঠীটির গোয়েন্দা কার্যক্রম খুব শক্তিশালী। সুনির্দিষ্ট তালিকার ভিত্তিতেই তল্লাশি চালাচ্ছে তারা।’

একই পরিস্থিতি হেরাতেও। সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিজয় উদযাপনের পর সশস্ত্র যোদ্ধারা প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম ধরে ধরে তাদের খোঁজ করতে শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

শহর ছেড়ে পালাতে গিয়ে অনেকেই বাধার মুখে পড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। কান্দাহার ও হেরাত দুই শহরেই ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ শুরু হবে, তাও জানা নেই কারো।

বাড়ছে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা

কাবুলে এখনও তালেবান যোদ্ধারা প্রবেশ করেনি বলে দখলকৃত অনেক শহরের বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন রাজধানীতে। কাবুলের রাস্তাঘাটে দেখা মিলছে না খেয়ে ঘুমিয়ে দিন পার করা হাজারো মানুষের।

কুন্দুজ ছেড়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে আসা ৩৫ বছর বয়সী আসাদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের রুটি কেনার পয়সা নেই। বাচ্চার জন্য ওষুধ কিনতে পারছি না।

‘আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা। নিঃস্ব হয়ে এ শহরে এসেছি। আল্লাহ জানেন কী আছে ভাগ্যে।’

এ বিভাগের আরো খবর