আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্কর গাহ আর জাবুল প্রদেশের রাজধানী কালাত দখল করেছে দেশটির সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তালেবান। তীব্র লড়াইয়ের পর শুক্রবার শহর দুটির নিয়ন্ত্রণ নেয় যোদ্ধারা।
এ নিয়ে দুই দিনে পাঁচটি প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নিয়েছে তালেবান। বৃহস্পতিবার প্রথমে গাজনি এবং পরে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহৎ শহর কান্দাহার ও হেরাতের নিয়ন্ত্রণ নেয় গোষ্ঠীটি।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ধীরে ধীরে রাজধানী কাবুলকে ঘিরে ফেলছে তালেবান যোদ্ধারা। দক্ষিণাঞ্চলীয় লোগার প্রদেশের রাজধানী পুলি-ই-আলিমের প্রধান পুলিশ কার্যালয় ও একটি কারাগার দখলে নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা। কাবুল থেকে শহরটির দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার।
এদিকে, লস্কর গাহ আর কালাত শহরের মাধ্যমে গত আট দিনে ৩৪টির মধ্যে ১৪টি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করেছে তালেবান। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলীয় বাঘদিস প্রদেশের রাজধানী কালা-ই-নিউ দখলের দাবি করেছে গোষ্ঠীটি। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।
হেলমান্দের প্রাদেশিক পরিষদের প্রধান আত্তাউল্লাহ আফগান জানান, প্রদেশটির সব সরকারি স্থাপনায় নিজেদের পতাকা উড়িয়েছে তালেবান। তবে লস্কর গাহের বাইরে তিনটি জাতীয় সামরিক ঘাঁটি এখনও আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণেই আছে।
জাবুল প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদের প্রধান আত্তা জান হাকবায়ান জানান, আঞ্চলিক রাজধানী কালাতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। নিকটবর্তী একটি সামরিক ঘাঁটি ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কর্মকর্তারা।
এ পর্যন্ত দখলকৃত ১৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে কান্দাহার ও হেরাতে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে দেখা হচ্ছে আফগান সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে। বিভিন্ন হিসাবে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চলের দখল নিয়েছে তালেবান এবং অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
অন্যদিকে আরও বেশ কয়েকটি প্রদেশ দখলের চেষ্টা করছে তালেবান। পশ্চিমাঞ্চলের ঘোর প্রদেশ, দক্ষিণাঞ্চলের উরুজগান ও লোগার প্রদেশের রাজধানীতে প্রবেশ করেছে তালেবান। নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার লড়াইয়ে মরিয়া আফগান সেনারা। চলছে তীব্র সহিংসতা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। নিরাপদে এ প্রক্রিয়া সম্পন্নে স্বল্প সময়ের জন্য ওয়াশিংটন তিন হাজার ও লন্ডন ৬০০ সেনা পাঠিয়েছে কাবুলে। কাবুলে নিজেদের দূতাবাস খালি করতে সহযোগিতার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা পাঠাচ্ছে কানাডাও।
তালেবানের অগ্রসর ঠেকাতে গত কয়েকদিনে আফগান বিমানবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে বেশ কিছু বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাবুল ও আশপাশের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে পরিস্থিতি চরম অস্থিতিশীল এবং সহিংসতা তীব্র হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তপথে পলায়নরত আফগান নাগরিকদের ঢোকাতে চামান সীমান্ত খুলে দিয়েছে পাকিস্তান। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে আটকে ছিলেন বিপুলসংখ্যক আফগান।