সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে কানাডা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কানাডা ও প্রজেক্ট প্লাওশে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, রিয়াদের কাছে সব ধরনের অস্ত্র বিক্রি বন্ধে অটোয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থা দুটি। বলেছে, অটোয়ার রপ্তানীকৃত অস্ত্র ইয়েমেনে যুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে রিয়াদ।
এ বিষয়ে সংস্থা দুটি ‘নো ক্রেডিবল এভিডেন্স: কানাডাস ফ্লড অ্যানালাইসিস অফ আর্মস এক্সপোর্টস টু সৌদি অ্যারাবিয়া’ শীর্ষক যৌথ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বুধবার।
প্রতিবেদনটিতে অভিযোগ করা হয়, অস্ত্রের বাণিজ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি এটিআইয়ের শর্ত লঙ্ঘন করেছে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডের সরকার। ২০১৯ সালে চুক্তিটিতে নাম লেখায় কানাডা।
পারস্য উপসাগরীয় রাজতন্ত্রের দেশটিতে কানাডার রপ্তানীকৃত অস্ত্রের ব্যবহারে অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন হতে পারে বলে শঙ্কা জানায় অ্যামনেস্টি ও প্লাওশে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অনুসন্ধান ও বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে এটিআই চুক্তি অনুযায়ী যেসব বাধ্যবাধকতা কানাডার ওপর বর্তায়, তার সঙ্গে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি সাংঘর্ষিক।’
২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। রাজধানী সানাসহ দেশটির বড় অংশ দখল করে নেয় শিয়া হুতি বিদ্রোহীরা। সংঘাত চরমে পৌঁছায় ২০১৫ সালে। হুতিরা ইরান সমর্থিত অভিযোগে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনে যৌথ সামরিক অভিযান শুরু করে। ইয়েমেনে রিয়াদ সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মনসুর হাদির পক্ষে শুরু হয় ওই অভিযান।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধে বিশ্বের সবচেয়ে মানবিক সংকটে থাকা দেশ ইয়েমেন। সাত বছরের যুদ্ধে প্রাণহানি দুই লাখ ৩৩ হাজারের বেশি এবং দুর্ভিক্ষে জর্জরিত লাখো মানুষ।
অ্যামনেস্টি-প্লাওশের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সৌদি আরবকে হালকা অস্ত্র থেকে শুরু করে স্নাইপার রাইফেলসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বিক্রি করেছে কানাডা। ইয়েমেনে যুদ্ধে সেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।
‘সৌদি আরবে কানাডার রপ্তানীকৃত অস্ত্রের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি বিবেচনায় অটোয়ার অবিলম্বে রিয়াদকে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা উচিত।’
এ বিষয়ে কানাডার পররাষ্ট্র বিভাগ গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার মুখপাত্র লামা খোদার ই-মেইলে দেয়া বিবৃতিতে বলেন, ‘অস্ত্র রপ্তানি ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত রপ্তানি ব্যবস্থা যেসব দেশের, সেগুলোর অন্যতম কানাডা।
‘আমাদের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার স্পষ্ট প্রতিফলন রয়েছে। গত বছর থেকে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি ঘটনায় সৌদি আরবকে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নতুন করে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
‘কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি থাকলে অনুমোদন বাতিল করা হবে।’
যদিও কানাডা সরকারের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির বিভিন্ন সংগঠন। জানিয়েছে, সৌদি আরবের ভেতরে এবং ইয়েমেনে মানবাধিকার লঙ্ঘনে কানাডার বিক্রিত অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি আছে।
এজন্য সৌদি সরকারের সঙ্গে সব ধরনের অস্ত্র চুক্তি বাতিলে কানাডা সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে তারা। বিশেষ করে সাবেক কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পারের আমলে হওয়া ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি বাতিলের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
হার্পারের আমলে চুক্তি হলেও ট্রুডো সরকারের সবুজ সংকেতে সেটি বাস্তবায়ন হয়। ক্ষমতায় এসে ট্রুডো অস্ত্র রপ্তানির বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। দাবি করেছিলেন মানবাধিকার ও পররাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা মেনেই অস্ত্র বাণিজ্য করে কানাডা সরকার।
তবে ২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যাকাণ্ডের পর চুক্তি বাতিলের বিষয়ে ভাবছেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রুডো। সে সময় রিয়াদে অস্ত্র রপ্তানি পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেয় অটোয়া।
একসময়ে সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ খাশোগজি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কট্টর সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত এই সাংবাদিক তুরস্ক ভ্রমণের সময় ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে নির্মম গুপ্তহত্যার শিকার হন তিনি। তার মরদেহের সন্ধান মেলেনি।
সৌদি যুবরাজের প্রত্যক্ষ নির্দেশে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল বলে মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। যদিও অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
২০২০ সালেও সৌদি আরবের কাছে ১০৫ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে কানাডা।