আফগানিস্তানের সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তালেবানকে পরাস্ত করতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশটির বেসামরিক সরকার।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল আব্দুল সাত্তার মিরজাকওয়াল বুধবার জানান, তালেবান যোদ্ধাদের পিছু হটাতে বেসামরিক জনতাকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কাবুল।
তালেবানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরকারের তিন দফা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নেয়া হয়েছে এ কৌশল।
পাঁচ সপ্তাহ আগেই এক লাখ ৩০ হাজার সদস্যের আফগান পুলিশ বিভাগের দায়িত্ব নেন মিরজাকওয়াল। তিনি জানান, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী মিলিশিয়াদের তালেবানবিরোধী লড়াইয়ে পূর্ণ সহযোগিতা দিচ্ছে সরকার।
এ ছাড়া দেশের প্রধান মহাসড়ক, বড় শহর ও সীমান্ত পারাপার এলাকাগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় প্রাধান্য দিচ্ছেন আফগান সেনারা। এক সপ্তাহের কম সময়ে ৯টি প্রাদেশি রাজধানী তালেবানের দখলে চলে যাওয়ার পর নেয়া হয় এ পদক্ষেপ।
মিরজাকওয়াল বলেন, ‘তিনটি ধাপে কাজ করছি আমরা। প্রথম ধাপে সরকারি বাহিনীর পিছু হটা ঠেকানোর লক্ষ্য আমাদের। দ্বিতীয় ধাপে বিভিন্ন শহরের আশপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলতে সেনাদের জড়ো করব আমরা।
‘বর্তমানে দ্বিতীয় ধাপের কাজ চলছে। নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে সরে যাওয়া সব সেনা ফিরিয়ে এনে দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হচ্ছে।’
তৃতীয় ধাপে তালেবানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী অভিযান শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জোটের সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকে গত তিন মাসে আফগানিস্তানে দখলকৃত এলাকার পরিধি দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়েছে তালেবান। বুধবার পর্যন্ত ছয় দিনে দখলে নিয়েছে ৯টি প্রাদেশিক রাজধানী।
মিরজাকওয়াল জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি বাহিনীর পরাজয় শুরু হয়েছে সড়ক-মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ হারানোর মধ্য দিয়ে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে দেশের ৪০০ এলাকায় সহিংসতা শুরু করে তালেবান। আকাশপথেও গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে খুব বেশি অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ জরুরি ত্রাণ সরবরাহ আর সহিংসতায় হতাহতদের আনা-নেয়ায় ব্যস্ত বেশির ভাগ হেলিকপ্টার।’
এ অবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে তালেবানের বিরুদ্ধে জনতাকে সংঘবদ্ধ করে অস্ত্র দিতে কেন্দ্রীয় সরকার এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালী নেতাদের দায়িত্ব দিচ্ছে বলে জানান মিরজাকওয়াল।
তিনি বলেন, ‘সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই মানুষগুলো প্রেসিডেন্টের প্রতি নিজেদের পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছেন।’
তবে স্থানীয় অনেক নেতা তালেবানের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীকে এক করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অস্ত্র সরবরাহ অপর্যাপ্ত বলে অভিযোগ করেছেন।
মাইদান ওয়ারদাক প্রদেশের গভর্নর লাওয়াং ফাইজান জানান, গত কয়েক মাসে ৩০০ পুরুষ তালেবানবিরোধী বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। তালিকা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। কিন্তু এদের মাত্র দুই-তৃতীয়াংশকে অস্ত্র সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।
বাকিদের অস্ত্র বা খাবার দেয়া তো দূরে থাক, পানি খাওয়ানোরও পয়সা নেই বলে অভিযোগ করেন গভর্নর।
তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রতি বিশ্বস্ততা ও সাহায্য করার ইচ্ছায় কোনো ঘাটতি নেই এই মানুষগুলোর। কিন্তু লড়াই করার জন্য যা কিছু দরকার, তার কিছুই পাচ্ছেন না তারা।’
চলতি বছরের জুনে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের অস্ত্র সরবরাহের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে আফগান সরকার।