ভারতে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের মাঝে বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডাকে দিল্লি যাচ্ছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব।
২০২৪ সালে দিল্লি জয়ের লক্ষ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরায় ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যটিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়াতে সক্রিয় হওয়ায় ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে।
ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকের সদস্যরা ত্রিপুরায় তৃণমূলের হয়ে সমীক্ষায় গেলে বিপ্লব দেব সরকার তাদেরকে হোটেল বন্দি করে রাখেন। বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এরপর ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে পূজা দিতে যাওয়ার পথে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়িবহরে বিজেপির সমর্থকরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ত্রিপুরায় গণতন্ত্র নেই, গুন্ডারাজ চলছে।
সম্প্রতি তৃণমূলের যুব নেতৃত্বের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মাথা ফাটিয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এমনকি বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হয়। গ্রেপ্তার ১৪ জন তৃণমূল যুব নেতাকে জামিন দিয়ে মুক্ত করে আনেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা।
এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি আহত তৃণমূলের যুব নেতা সুদীপ রাহা ও জয়া দত্তকে দেখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে ত্রিপুরায় হামলা হয়েছে। চিফ মিনিস্টার বিপ্লব দেবের এত সাহস হতে পারে না।’
২০২৩ সালে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন হবার কথা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে সংগঠন মজবুত করতে মাঠে নেমেছে তৃণমূল। বিজেপি, কংগ্রেস ছেড়ে অনেকেই ইতিমধ্যেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অনেক বিজেপি নেতাকর্মীদের তৃণমূলে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।
তাই দলে বিজেপি নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে আর ত্রিপুরায় তৃণমূলকে সামলাতে বিপ্লব দেবকে দিল্লিতে অমিত শাহের এমন তলব বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সংগঠনের পাশাপাশি ত্রিপুরা মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে বিপ্লব দেব আর অমিত শাহের মধ্যে। ফাঁকা থাকা মন্ত্রিসভার কয়েকটি পদ এবার পূরণ হতে পারে।
ত্রিপুরার রাজনীতিতে অন্যতম মুখ সুদীপ রায় বর্মন, যার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সম্পর্ক ভালো নয় বলে আলোচনায় এসেছে। সুদীপের তৃণমূলে যোগ দেয়া নিয়ে টানাপড়েন চলার মাঝে সুদীপ রায় বর্মন সামাজিক মাধ্যমে জানান, তিনি বিজেপিতেই আছেন।
তৃণমূলের লক্ষ্য এবার ত্রিপুরা জয়
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মোদি-অমিত শাহ জুটি হুঙ্কার দিয়েছিল ২০০ আসনে জেতার। ক্ষমতাসীন দলের হুঙ্কারকে ছেলেখেলায় পরিণত করে বড় জয় ঘরে তোলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস।
এবার ভারত জয়ের পথে হাঁটতে শুরু করছে তৃণমূল। সেই জয়ের এবার দ্বিতীয় টার্গেট ত্রিপুরা রাজ্য।
তৃণমূলের একটি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন, সেখানকার বিজেপি সরকারকে হারাতে তৃণমূলের অভিষেক-মুকুল জুটি প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
রাজ্যের বাইরে তৃণমূলের সংগঠন বাড়াতে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন খুব ভালো বিকল্প হিসেবে নেবে তৃণমূল। যেহেতু মুকুল রায়ের হাত ধরে একসময় ত্রিপুরায় তৃণমূলের সংগঠন ছিল, তাই মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিলে ত্রিপুরায় তৃণমূলের সংগঠন অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে।
সেই মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে ফিরেছেন ঘরের মাঠ তৃণমূলে। এবার পূর্ণ শক্তি নিয়ে ত্রিপুরায় তৃণমূল কাজ করবে বলে দলের কয়েকজন নেতাও কথা বলেছেন।
অন্যদিকে ত্রিপুরা বিজেপির অন্দরের কোন্দল এখন সর্বজনবিদিত। একদিকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব, অন্যদিকে সুদীপ রায় বর্মন ও গোষ্ঠী।