মুসলমান, হিন্দু, বা খ্রিস্টান নয় শিশুর জন্ম নিবন্ধনে ধর্মের জায়গায় লেখা হলো মানবতা। নিজের একমাত্র সন্তানের জন্মসনদ পাওয়ার জন্য ধর্মের জায়গায় হিউম্যানিজম বা মানবতা লিখে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার রানাঘাটের এক দম্পতি।
আবেদনপত্র পেয়ে দ্বিধায় পড়ে যায় পৌর কর্তৃপক্ষ। কারণ এরকম আবেদন আগে কখনও আসেনি। পৌর কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে সেটি রানাঘাট মহকুমা শাসকের কাছে যায়। অনেক টানাপোড়েনের পর মানবধর্মকেই স্বীকৃতি দেয় মহকুমা প্রশাসন।
প্রচলিত ধর্মীয় ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে ধর্মের জায়গায় মানবধর্মের স্বীকৃতি পাওয়া সহজে হয়নি। শিশুটির বাবা স্বরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাকে প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। সন্তানের ধর্মের জায়গায় যাতে মানবধর্ম লেখা হয়, তার জন্য কাতর আবেদন করি। অবশ্য শেষ পর্যন্ত আমাদের সেই আবেদনকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।’
এ বিষয়ে রানাঘাট পৌরসভার মুখ্য প্রশাসক কৌশল দেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মানবধর্ম লেখা একটি জন্মসনদ রানাঘাট পৌরসভা থেকে দেয়া হয়েছে। আবেদন জমা পড়ার পর রানাঘাট মহকুমা শাসকের অনুমতি নিয়ে এ সনদ দেয়া হয়েছে। ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে কেউ যদি মানবধর্ম লিখতে চান, এর থেকে ভালো কিছু হয় না। এটি ব্যতিক্রমী বিষয়।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে কেউ যদি এ ধরনের আবেদন করেন, সেক্ষেত্রে আমরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাইব। অনুমতি পেলে জন্মসনদ দেয়া হবে।’
শিশুটির বাবা স্বরূপ মুখোপাধ্যায় এবং মা মৌমিতা মুখোপাধ্যায় রানাঘাট দুই নম্বর ব্লকের আইসমালি পুরাতন পাড়ার বাসিন্দা। স্বরূপ মুখোপাধ্যায় বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। নিজেকে সমাজকর্মী বলে পরিচয় দেন। নিজের জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালান। হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও কোনো প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাসী নন তিনি।
স্বরূপ বলেন, ‘মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সর্বোত্তম ধর্ম।’
২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয় স্বরূপ ও মৌমিতার। সেখানেও মানবধর্ম লেখা হয়।
স্বরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশনেও মানবধর্ম উল্লেখ করা ছিল। চাকদহের যে ভবনে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল, সেটি সাজানো হয়েছিল এনআরসি বিরোধী পোস্টারে । আমরা আগাগোড়া চেয়ে এসেছি ধর্মের গণ্ডি টপকে মানুষের পাশে থাকার ধর্মকে নিয়ে বড় হয়ে উঠুক আমাদের সন্তান। শেষ পর্যন্ত সেই মর্যাদা পাওয়ায় আমরা খুশি।’
৫ এপ্রিল রানাঘাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন স্বরূপের স্ত্রী মৌমিতা মুখোপাধ্যায়। তার নাম রাখা হয়েছে সৃজিত।