দলিত শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা (ক্রাইম ব্রাঞ্চ)। ঘটনাস্থল ও আশেপাশে খোঁজা হচ্ছে আলামত।
অন্যদিকে শিশুর মা-বাবার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার অভিযোগে মামলা হয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে।
দিল্লি পুলিশ জানায়, দলিত শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে। যেখানে ৯ বছরের শিশুটিকে পোড়ানো হয়েছিল, সেই শ্মশানে ফরেনসিক তদন্ত শুরু হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির পোড়া পায়ের অংশ বিশেষ পাওয়া গেছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কিছু সামগ্রী উদ্ধার করেছেন ক্রাইম ব্রাঞ্চের কর্মকর্তারা।
ঘটনার পর স্থানীয় থানা যেসব আলামত ও তথ্য পেয়েছিল তা তুলে দেয়া হয়েছে অপরাধ দমন শাখার কর্মকর্তাদের হাতে। সেসব আলামত ও তথ্য যাচাই চলছে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের পুরাতন নাঙ্গল এলাকায় গত রোববার সন্ধ্যায় ৯ বছর বয়সী এক দলিত শিশুকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠে। স্পর্শকাতর ঘটনাটি নিয়ে ক্ষোভের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে দিল্লির অলিগলিতে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বুধবার সকালে ছুটে যান শিশুর বাড়িতে। ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তিনি দলিত পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন। আগে থেকেই রাহুল ঘটনা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
দিল্লির এ ঘটনায় প্রতিবাদে সরব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দলিত নেতা তথা ভিম সেনার প্রধান শেখর আজাদসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
এমনকি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তিনি শিশুটির পরিবারের সঙ্গে দেখা করে আইনি লড়াইয়ে সাহায্য করবেন।
পুরনো দিল্লির একটি শ্মশানের কাছেই দলিত পরিবারটির বসবাস। রোববার সন্ধ্যায় নয় বছরের হাসিখুশি শিশুটি একটি ঠাণ্ডা পানির মেশিন থেকে পানি আনতে গিয়ে আর ঘরে ফেরেনি। কিছুক্ষণ পর তাদের বাড়িতে খবর আসে শিশুটি বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে।
শিশুর মা অভিযোগ করেছেন, শ্মশানের প্রধান পুরোহিত রাধে শ্যাম জোর করেই শিশুর দেহ সৎকার করানোর ব্যবস্থা করেন। শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার পর আলামত গায়েব করতে লাশ দ্রুত পুড়িয়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ তোলেন স্বজনরা।
পুলিশ এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুরোহিত রাধে শ্যাম ছাড়াও কুলদীপ কুমার, লক্ষ্মী নারাইন ও মহম্মদ সেলিম নামে তিনজনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ
আলোচিত এ ঘটনার বিচার দাবিতে সোচ্চার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আইন অমান্যের। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশুর বাবা-মার ছবি পোস্ট করেছেন-এমন অভিযোগে পকসো আইনে মামলা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
দিল্লির পুলিশ কমিশনার রাকেশ আন্থানাকে লেখা এক চিঠিতে অভিযোগকারী লিখেছেন, নির্যাতিতার বাবা-মার ছবি প্রকাশ্যে এনেছেন রাহুল। যা পকসো আইনের ২৩ নম্বর ধারার বিরোধী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেও স্পষ্ট বলা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনায় নির্যাতিতা বা তার পরিবারের সদস্যদের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করা যায় না। সেকারণে অবিলম্বে কংগ্রেস সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে পকসো ও জুভেনাইল জাস্টিস আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। এ ব্যাপারে টুইটার কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নারী ও শিশু সুরক্ষা কমিশন।