পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশের একটি শহরে হিন্দু মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনায় মোতায়েন করা হয়েছে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের।
ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে বৃহস্পতিবার প্রতিক্রিয়া জানান পাকিস্তানের সরকারপ্রধান।
তিনি লেখেন, ‘দোষীদের গ্রেপ্তারে পাঞ্জাব প্রাদেশিক পুলিশের প্রধানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থাও নিতে বলা হয়েছে।’
সরকারি খরচে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
পাঞ্জাব পুলিশের কর্মকর্তা আসিফ রাজার বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, অর্ধশত সন্দেহভাজনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। আপাতত মন্দির প্রাঙ্গণে পাহাড়া দিচ্ছে সেনারা। হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের এক হিন্দু আইনপ্রণেতা লাল মালহি টুইটারে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভোঙ নামের গ্রাম থেকে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হিন্দু পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
রহিম ইয়ার খান জেলার ভোঙের ওই মন্দিরে হামলা হয় গত বুধবার। ক্ষুব্ধ মুসলিম জনতা মন্দিরটি একেবারে ভেঙে দিয়েছে বলে জানায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
মুসলিমদের প্রতি অপমানসূচক মন্তব্যের অভিযোগে আট বছরের একটি হিন্দু শিশুকে চলতি সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আদালত শিশুটিকে জামিনে মুক্তি দেয়ার পরই স্থানীয় গণেশ মন্দিরে সংঘবদ্ধ হামলা চালায় একদল মুসলিম।
মন্দিরের প্রায় সব মূর্তি ভেঙে দেয় উচ্ছৃঙ্খল জনতা; প্রবেশপথ পুড়িয়ে দেয় আগুনে।
বিক্ষুব্ধদের দাবি, মুসলিমদের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছিল শিশুটি। মাদ্রাসার গ্রন্থাগারের কার্পেটের ওপর ইচ্ছা করে মূত্রত্যাগ করেছিল। এর মাধ্যমে সে ব্লাসফেমি, অর্থাৎ ধর্ম অবমাননার অপরাধ করেছে।
পাকিস্তানের ব্লাসফেমি আইনে এ ধরনের অপরাধ শাস্তিযোগ্য। অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।
অতীতে অনেক তুচ্ছ ঘটনায় পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রূপ নিয়েছিল। এসব ঘটনা সংঘবদ্ধ আক্রমণ উসকে দেয়া ও রক্তক্ষয়ী সহিংসতা পর্যন্ত গড়িয়েছে।
গত কয়েক বছরে পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি হিন্দু মন্দিরে হামলা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পখতুনখোয়া প্রদেশে শতবর্ষ পুরোনো একটি মন্দির ভেঙে দেয় উচ্ছৃঙ্খল জনতা।
১৯৯০ সালের পর থেকে ব্লাসফেমি আইনের নামে পাকিস্তানে কমপক্ষে ৭৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে, যারা ‘অপরাধী ছিলেন না’ বলে পরবর্তী সময়ে আদালতের রায়ে বেরিয়ে আসে।