সমাজ সংস্কারে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী। সচেতনতা বাড়াতে ছুটছে গ্রাম থেকে গ্রামে। অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে বন্ধ করছে বাল্যবিবাহ। অথচ সে নিজেই এক কিশোরী।
পশ্চিমবঙ্গের একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী দীপিকা সাহু। সাতটি বাল্যবিবাহ রুখে দিয়ে এখন সে আলোচনায়। সমাজ বদলের সৈনিক দীপিকাকে সম্প্রতি পুরস্কৃত করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নামখানার শিবরামপুর গ্রামের বাসিন্দা দীপিকা। শারীরিক ব্যাধি নয়, সামাজিক ব্যাধিও যে কতটা ভয়ংকর তা অল্প বয়সে বুঝে গিয়েছে দীপিকা। কিশোরী ও নারীদের বেঁচে থাকার লড়াই তাকে বিচলিত করেছে। আর তাই অষ্টম শ্রেণীতে উঠেই যোগ দেয় কন্যাশ্রী ক্লাবে।
দীপিকার স্কুলে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে অবহিত করতে। সামাজিক এ ব্যাধি নিয়ে আলোচনা দীপিকার মনে গেঁথে যায়। তারপর থেকে বাল্যবিবাহের সংবাদ শুনলেই তা রুখে দিতে ছুটে যায় এই কিশোরী। তাকে সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
দীপিকা সাহু জানায়, ২৮ এপ্রিল একটি বাল্যবিবাহের খবর পেয়েছিল। খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারে, তারই এক বান্ধবীকে জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্য নিয়ে দীপিকা আলাপ করে বান্ধবীর অভিভাবকদের সঙ্গে। দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পর সুফল মেলে। স্কুল পড়ুয়া বান্ধবীর বিয়ে আটকাতে পেরে খুশি দীপিকা।
দীপিকার কথায়, ‘রাজ্য সরকার কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে যে টাকা দেয়, তা দিয়ে ১৮ বছর পর্যন্ত পড়াশোনা করা যায়। তাই মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ না করার জন্য বলছি অন্যদের। অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ করেই বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হচ্ছে।’
মেয়ের কীর্তিতে গর্বিত মা শিবানী সাহু। তিনি বলেন, ‘বাল্যবিবাহ কতটা খারাপ, সেটা আমার মেয়ে বুঝতে পেরেছে। অন্যদেরও বোঝাচ্ছে সে, তাতে আমি গর্বিত।’
সমাজসচেতনতা বাড়াতে স্কুলছাত্রী দীপিকার অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছে ডায়মন্ডহারবার স্বাস্থ্য জেলা। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ভবন ও জেলা প্রশাসনের তরফে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।