ফোনে আড়িপাতা নিয়ে ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস ইস্যুর পর এবার রাষ্ট্রীয় বিমা সংস্থা বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে সরব হলো তৃণমূল। কেন্দ্রীয় বিমা সংস্থা বেসরকারীকরণের পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে কড়া চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ কীভাবে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামাবে তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়ে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ভারতীয় সংসদের ভেতরে-বাইরে ফোনে আড়িপাতা নিয়ে ইসরায়েলের স্পাইওয়্যার ইস্যুতে কোণঠাসা কেন্দ্র সরকারকে আরও কোণঠাসা করতে বিমা সংস্থা বেসরকারিকরণের মত ইস্যু সামনে আনছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিমা সংস্থা বেসরকারীকরণ ইস্যুতে অলআউট ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে আগেই জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন।
কেন্দ্রের মোদি সরকারের রাষ্ট্রীয় বিমা সংস্থা বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রের জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে সর্বাত্মক আন্দোলনের পথে যাবেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সুর চড়াল তৃণমূল।
চিঠিতে সরকারি পরিসংখ্যান দিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ রাষ্ট্রীয় বিমা সংস্থাগুলো বেসরকারীকরণ করতে কেন্দ্রীয় সরকারের যে নীতিগত সিদ্ধান্ত সেটি দেশের মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। জানতে পেরেছি, চারটি সাধারণ রাষ্ট্রীয় বিমা সংস্থার মধ্যে প্রথমেই ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে বেসরকারি হাতে দিতে চাইছে মোদি সরকার।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে দেয়া চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আপনি জানেন, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহক ১ দশমিক ৭৪ কোটি। এরমধ্যে অনেকেই সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীর প্রতিনিধি। এই সংস্থার কর্মী সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৬১ জন । প্রিমিয়াম বাবদ আয় হয়ে থাকে ১৭ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। এই সংস্থা সরকারি সিকিউরিটি ও বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ১১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।’
অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র চিঠিতে লিখেছেন, ‘ভারতীয় জীবনবীমা নিগমকেও (এলআইসি) বিক্রি করবে সরকার, এমন কথাও শুনেছি। এলআইসি দেশের নাগরিকদের কাছে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি। ১৯৫৬ সালে সংস্থার গোড়াপত্তনের দিন থেকে দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেছে এলআইসি। যেখানে দিনের পর দিন ধরে দেশের সড়ক, রেল পরিবহন, বিদ্যুৎ, টেলিকম, কৃষি এবং বন্দরগুলোতে লগ্নি করেছে তারা।’
অমিত চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘সংস্থার বেসরকারীকরণের সরকারি সিদ্ধান্ত ১ কোটি ১৪ লাখ কর্মী এবং ১২ থেকে ১৫ লাখ বিমা এজেন্টের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন করবে। ২০২০-২১ আর্থিক বছরে সংস্থার বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৬ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি সিকিউরিটি আছে ২৩ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ।
‘সরকার, সরকারি সংস্থা ও কর্পোরেটগুলোকে এলআইসির পক্ষ থেকে মোট ঋণ দেয়া হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। এলআইসির বেসরকারিকরণ একটি প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেবে, যেখানে ৩০ কোটি বিমা গ্রহীতার স্বার্থ বিপন্ন হতে পারে।’