জনসমাগমস্থলে ঢুকতে হলে বাধ্যতামূলক হেলথ পাস দেখানোর ফ্রান্স সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে লাখ লাখ মানুষ দেশটিতে বিক্ষোভ করেছে।
রাজধানী প্যারিসসহ ফ্রান্সের অন্যান্য শহরে স্থানীয় সময় শনিবার এ বিক্ষোভ হয় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের তিন সদস্যকে আহত করেছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন টুইটবার্তায় জানান, বিক্ষোভ চলাকালে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জনই প্যারিসের বাসিন্দা।
এ নিয়ে টানা তিন সপ্তাহ ধরে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর নতুন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে ফরাসিরা।
বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে মাখোঁর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে।
অনেকে এই বিক্ষোভে ২০১৮ সালে জ্বালানি করসহ জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার প্রতিবাদে ফরাসিদের ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের প্রতিফলন পাচ্ছেন।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দেশজুড়ে ২ লাখ ৪ হাজার ৯০ জনের মতো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।
এদের মধ্যে শুধু প্যারিসেই রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার মানুষ। রাজধানী শহরে এ সংখ্যা গত সপ্তাহের চেয়ে ৪০ হাজার বেশি।
প্যারিসে বিক্ষোভে অংশ নেয়া অ্যানি নামের এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘আমরা একটি বিচ্ছিন্ন সমাজ তৈরি করছি।
‘মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দেশ এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, আমার কাছে তা অবিশ্বাস্য ঠেকছে।
‘এ কারণেই আমি রাস্তায় নেমেছি। এর আগে আমি কখনো বিক্ষোভে অংশ নিইনি। আমাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে বলে আমি মনে করি।’
ফ্রান্সের জাদুঘর, সিনেমা হল বা সুইমিং পুলে এরই মধ্যে হেলথ পাস ছাড়া দর্শনার্থীদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
করোনা প্রতিরোধী টিকার সব ডোজ নেয়া হয়েছে বা করোনা পরীক্ষার ফল সম্প্রতি নেগেটিভ এসেছে এ-সংক্রান্ত হেলথ পাস জনসমাগমস্থলে প্রবেশের আগে দর্শনার্থীদের দেখাতে হবে- ফ্রান্সে সম্প্রতি এ নিয়ম জারি হয়েছে।
করোনার চতুর্থ ধাক্কা সামলানোর অংশ হিসেবে ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
ফ্রান্সের পার্লামেন্ট চলতি সপ্তাহে নতুন আরেক আইনের অনুমোদন দেয়।
এতে বলা হয়, স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক।
পাশাপাশি জাদুঘর, সিনেমা হল বা সুইমিং পুল ছাড়াও রেস্তোরাঁ, বার, ট্রেড শো, ট্রেন ও হাসপাতালও হেলথ পাসের অধীনে আনা হয়েছে।
প্যারিসে প্রতিবাদকারীরা যাতে অনুমোদিত সড়কে বিক্ষোভ জানায়, এ জন্য সেখানে প্রায় তিন হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে বিক্ষোভ চলাকালে প্যারিসের শজ-ইলিজে অ্যাভিনিউয়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি হয়।
ফ্রান্সের মারসেইল, লিয়ন, মতপিলিয়ার, নত ও তুলুজ শহরে বিক্ষোভকারীরা ‘স্বাধীনতা’, ‘হেলথ পাস নয়’ স্লোগান দেয়।