আফগানিস্তানের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ তিন শহরের দখল নিয়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষ চলছে তালেবান যোদ্ধাদের।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, হেরাত, লশকর গাহ ও কান্দাহার শহরের কয়েকটি অঞ্চলে ঢুকে পড়েছে তালেবান যোদ্ধারা।
গুল আহমেদ কামিন নামের কান্দাহারের এক সংসদ সদস্য জানান, যেকোনো সময় দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটির দখল নিতে পারে তালেবান।
এরই মধ্যে কান্দাহারের লাখ লাখ মানুষ সংঘর্ষ এড়াতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত ২০ বছরে শহরের ভেতর এত ভয়াবহ সংঘর্ষ দেখিনি।’
গুল আহমেদ বলেন, ‘কান্দাহারকে নিজেদের অস্থায়ী রাজধানী করতে চাইছে তালেবান। এই শহর দখল তাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
‘কান্দাহার তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে আশপাশের আরও পাঁচ থেকে ছয়টির মতো প্রদেশ আমরা হারাব।’
তিনি বলেন, ‘কান্দাহার শহরের বিভিন্ন জায়গায় এ মুহূর্তে ছড়িয়ে আছে তালেবান যোদ্ধারা।
‘তারা যদি পুরোপুরি শহরের ভেতরে ঢুকে পড়ে, তাহলে তাদের হটাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না আফগান বাহিনী। কারণ এতে শহরের বিপুলসংখ্যক বেসামরিক মানুষ হতাহত হবে।’
পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাত থেকে টোলো নিউজের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহরটির দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করেছে তালেবান। আফগান বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ চলছে।
হেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা তালেবান যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে।
আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমন্দ প্রদেশের রাজধানী লশকর গাহর কেন্দ্রস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে তালেবান অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
সেখানে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে আফগান বাহিনী।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই দেশটি দখলে মে মাসের শুরু থেকেই তৎপরতা চালায় তালেবান। এ নিয়ে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রতিদিনই তাদের সংঘর্ষ বাধছে।
সম্প্রতি আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি জেলা এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বর্ডার ক্রসিং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবান।
চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার ২০ বছর পূর্ণ হবে।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলা চালানো জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে তালেবানের সম্পর্কের জেরে আফগানিস্তানে সে সময় সামরিক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো।
মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত অভিযানে ওই বছরই আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালেবানকে উৎখাত করা হয়।
তালেবান উৎখাত হলেও আফগানিস্তানে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত দেশের সেনারা।
চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরাতে নিজেদের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এপ্রিলে বাইডেনের ওই ঘোষণার পর ন্যাটোর অন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোও আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের কথা বলে। ধীরে ধীরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি থেকে বিদেশি সেনা সরতে শুরু করে, যা এখন প্রায় শেষের পথে।