বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মমতাই অন্যতম সেরা বাঙালি নারী, মত অনিল কন্যার

  •    
  • ৩১ জুলাই, ২০২১ ১৭:০০

সিপিএম পার্টির সদস্য ও ইতিহাসের অধ্যাপক অজন্তা বিশ্বাস তার শেষ কিস্তিতে, কীভাবে ধাপে ধাপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অগ্নিকন্যা থেকে জননেত্রী হয়ে উঠেছেন, কীভাবে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছেন, সেসব কথা লিখেছেন।

তৃণমূলের দৈনিক মুখপত্র জাগো বাংলায় সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের মেয়ে অজন্তা বিশ্বাস তার চার কিস্তির ‘বঙ্গরাজনীতিতে নারীশক্তি’ শীর্ষক উত্তর সম্পাদকীয়তে বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অন্যতম সেরা বাঙালি নারী বলে উল্লেখ করেছেন।

সিপিএম পার্টির (ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, মার্ক্সবাদী) সদস্য ও ইতিহাসের অধ্যাপক অজন্তা বিশ্বাস তার শেষ কিস্তিতে, কীভাবে ধাপে ধাপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অগ্নিকন্যা থেকে জননেত্রী হয়ে উঠেছেন, কীভাবে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছেন, সেসব কথা লিখেছেন।

অজন্তা বিশ্বাস তার উত্তর সম্পাদকীয়তে প্রাক স্বাধীনতা থেকে বাংলার রাজনীতির লড়াইয়ে বিভিন্ন বাঙালি নারীর সমুজ্জ্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি লিখেছেন, মহিলানেত্রী হিসেবে রাজনীতির অসম লড়াইয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন যে নেত্রী তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গৃহবন্দি নারী বিংশ শতক থেকে স্বাধীনতা পেতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তা সহজলভ্য ছিল না। আজও নেই। হয়তো সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীর সার্বিক পরিস্থিতি তুলনামূলক উন্নতি হলেও সবক্ষেত্রে তা অর্জন করতে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হয়েছে নারীকে। এমনই কঠিন লড়াইয়ে বারবার জয়ী হয়েছেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

অগ্নিকন্যা, দিদি এবং ঘরের মেয়ে অভিধাও তিনি অর্জন করেছেন আপামর জনসাধারণের কাছ থেকে।

কলকাতার হাজরা অঞ্চলের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার জন্মগ্রহণকারী এক সাধারণ মেয়ে আজ টাইম ম্যাগাজিনের মনোনীত ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে একজন অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।

রাজনীতিতে বাংলার নারীদের আগে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে দেখা গেলেও সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান রাজনৈতিক পরিসরে এক বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করে।

ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে যাত্রা শুরু। অল্প বয়সেই কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। কংগ্রেসনেত্রী হিসেবে শিগগিরই পরিচিতি লাভ করেন।

১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও মন্ত্রীসভায় তিনি মানবসম্পদ উন্নয়ন, ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিকাশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

জনগণের প্রয়োজনে গর্জে উঠেছেন বহুবার। একাধিকবার পদ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই সময়কার কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন তিনি। কংগ্রেস তাকে বহিষ্কার করে।

১৯৯৭ সালে সম্পূর্ণভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এক বাঙালি নারী হিসেবে একটি নতুন সর্বভারতীয় দলের প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাস রচনা করেছিলেন মমতা।

১৯৯৯ সালে বাংলার উন্নয়নের স্বার্থে তিনি এনডিএ জোটে যোগ দিয়েছিলেন। এনডিএ জোট সরকার গঠন করলে তিনি ভারতের রেলমন্ত্রী মনোনীত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের রেলের অভূতপূর্ব উন্নতি করেছিলেন।

২০০১ সালে মতবিরোধের কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনডিএ জোট ছেড়ে দেন। ২০০৪ সালে পুনরায় কয়লা ও খনি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন তিনি। ওই বছর তিনি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে একমাত্র সাংসদ নির্বাচিত হন।

২০০৬ সালে সিঙ্গুরের টাটার কারখানা স্থাপনের বিষয়ে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। সেই গণবিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনিচ্ছুক কৃষকদের সংগঠিত করে আন্দোলনের রূপ দেন এ জননেত্রী। এ বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও নির্বাচনে গণরায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে যায়।

২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে তার দল সাফল্য লাভ করে। দ্বিতীয়বার রেলমন্ত্রী হন তিনি। মহিলানেত্রী হিসেবে মহিলা সংরক্ষণ বিলকে যেমন সমর্থন করেছিলেন, তেমন মহিলা রেলমন্ত্রী

হিসেবে রাজ্য ও দেশের বেশ কিছু শাখায় লেডিজ স্পেশাল ট্রেন চালু করার মত সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বাঙালি মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেন এবং পুনর্বার ইতিহাস রচনা করেন। সমস্ত বাধা পেরিয়ে সাফল্যের লক্ষ্যে এগিয়েছেন সরকারি কর্মসূচিগুলি (কন্যাশ্রী, কৃষকবন্ধু, স্বাস্থ্য সাথী ইত্যাদি) ভিন্নধর্মী রূপায়নের মাধ্যমে।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে তৃতীয়বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। কঠিন লড়াইয়ে একক শক্তি হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে নারী শক্তির জয় বন্দনায় প্রতিফলিত হয়েছে তার কণ্ঠস্বরে।

তিনি বলেন, ‘এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ইতিহাস, মিরাকল। আমি বাংলার নারী শক্তির কাছে মাথানত করছি।’

একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে নজির গড়েছেন সারা বিশ্বের সামনে নিজ যোগ্যতায়। রাজনৈতিক ইতিহাসে বাঙালি নারী হিসেবে নিজেকেই অন্যতম সেরা প্রমাণিত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশস্ত করেছেন নারীদের জয়যাত্রা।

তাই এই প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে কুর্নিশ জানাই সকল পথপ্রদর্শক বাঙালি সংগ্রামী নেত্রীদের, যারা প্রাক স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত রাজনীতিতে নারীর স্থান সুদৃঢ় করার কাজ করে চলেছেন এবং নারী আন্দোলনকে সুদুরপ্রসারী করে নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন।

এখন দেখার বিষয়, এক সময়ের দাপুটে নেতা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পলিটব্যুরোর সদস্য, প্রয়াত অনিল বিশ্বাসের মেয়ে অজন্তা বিশ্বাসের এমন মমতা স্তুতিতে সিপিএমের তরফে কী প্রতিক্রিয়া আসে।

ইতিমধ্যেই এনিয়ে সিপিএমের অন্দরে চর্চা এবং উষ্মা দুই রয়েছে। দলের তরফে এনিয়ে নেতাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে আগেই নিষেধ করা হয়েছিল।

এ বিভাগের আরো খবর