করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহর সিডনিতে বাড়ানো হয়েছে লকডাউনের সময়সীমা। শহরটিতে বিধিনিষেধের পূর্ণ বাস্তবায়নে মোতায়েন করা হয়েছে শত শত সেনা।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রূপ পরিবর্তিত ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত একমাত্র ব্যতিক্রম অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড।
সারা বিশ্বে মহামারির দেড় বছরের বেশি সময়ে করোনায় প্রাণহানি ৪২ লাখ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে প্রায় ২০ কোটি মানুষের দেহে।
প্রাণহানি লাখের ঘর ছুঁয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ ১০টির বেশি দেশে। জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইরানসহ আরও কিছু দেশে লাখের কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ায় করোনা মহামারিতে মোট প্রাণহানি ৯২৩। ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৩৪ হাজারের কম মানুষের দেহে।
চলতি বছরের জুনে অস্ট্রেলিয়ায় শনাক্ত হয় অধিক সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। তখন থেকে মাত্র দেড় মাসে ভ্যারিয়েন্টটিতে আক্রান্ত হন প্রায় ৩ হাজার মানুষ; মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের।
পাঁচ সপ্তাহের লকডাউন সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বড় শহর ও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনিতে করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। শুক্রবারও আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৭০ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্তের খবর জানিয়েছে নগর প্রশাসন।
এ অবস্থায় আসে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত। ভাইরাস বিস্তারের কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সেনারা।
বিধিনিষেধের মধ্যে অন্যতম হলো বাড়ি থেকে বের হলেও ১০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব অতিক্রমে নিষেধাজ্ঞা।
রাজ্যের পুলিশবিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড এলিয়ট জানান, সিডনিবাসীর অনেকেই ভাবছেন যে তারা এসব স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও চলবে। তাদের নিয়ন্ত্রণেই সেনাবাহিনী সহযোগিতা করবে।
কমপক্ষে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বর্ধিত লকডাউন চলাকালীন নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা, শরীরচর্চা, রোগীর পরিচর্যাসহ অন্যান্য জরুরি কারণ ছাড়া কারও বাড়ির বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই।
অস্ট্রেলীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সংক্রমণ বৃদ্ধির মূল কারণ অনুমোদিত চলাচল বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ অনুমতি নিয়ে বাইরে বের হওয়া ব্যক্তিদের মাধ্যমেই এ পর্যায়ে ছড়াচ্ছে ছোঁয়াচে ভাইরাসটি।
গত বছর রাজধানী মেলবোর্নেও লকডাউন কার্যকরে সহযোগিতা করেছিল সেনাবাহিনী।
এদিকে লকডাউনের কার্যকারিতা নিশ্চিতে প্রশাসনের সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তে নগরবাসীর মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই মনে করছেন, সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রয়োজনের বেশি কঠোর হয়েছে প্রশাসন।
সমালোচকরা সরকারের প্রতি মহামারির বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গণটিকা কার্যক্রমে গতি বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্বে করোনার টিকাদানে ধীরগতির অন্যতম দেশ অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মাত্র ১৭ শতাংশ টিকা নিয়েছেন।