ভারতীয় পার্লামেন্টের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর সপ্তম দিনেও বিরোধী দলগুলোর হল্লায় দফায়-দফায় মুলতুবি হয়েছে দুই কক্ষের অধিবেশন। পেগাসাস ইস্যুকে হাতিয়ার করেই বৃহস্পতিবার সরব হয়েছিলেন বিরোধী দলের এমপিরা।
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে পার্লামেন্টের অচলাবস্থায় উষ্মা প্রকাশ করেন নিম্নকক্ষ লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। প্রয়োজনে পার্লামেন্টের মর্যাদাহানির দায়ে অভিযুক্ত এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ওম বিড়লা বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যদি এই চেয়ারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে সরাসরি আমার চেম্বারে আসুন, এসে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করুন। চেয়ারে পেপার ছোঁড়ার মতো ঘটনা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তার কথায়, ‘এই আচরণ পার্লামেন্টের নীতি বিরুদ্ধ। এখানে যারা আছেন তারা কয়েক লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের অভাব-অভিযোগ তুলে ধরেন। তাই পার্লামেন্টের নীতি মেনে চলা ও গৌরব বৃদ্ধি করা তাদের কর্তব্য।’
পাশাপাশি বিধি ভাঙলে বা পার্লামেন্টের অমর্যাদা করলে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলেও জানান তিনি।
কিন্তু তাতেও কমেনি বিরোধীদের ঝাঁঝ। অধ্যক্ষের বক্তব্যের পর কংগ্রেস এমপি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘এই চেয়ারের যে একটা মর্যাদা রয়েছে, তা আমরা জানি। আমরা সবাই জানি যে আপনার নেতৃত্বে পার্লামেন্টে অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। কিন্তু এ বার যা ঘটছে তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ঔদ্ধত্যই দায়ী।’
এদিকে পার্লামেন্ট চলার প্রসঙ্গে সরকার পক্ষকে শর্ত দিয়েছে কংগ্রেস।
এদিন রাজ্যসভায় কংগ্রেসের এমপির মল্লিকার্জুন খারগে বলেছেন, ‘আমরা পেগাসাস ইস্যুতে শুধু আলোচনা চাই। গুপ্তচরবৃত্তি দেশবিরোধী কাজ। যদি ওরা আমাদের আলোচনা করতে দেয় তাহলে পার্লামেন্ট চলবে। আমরা আজ বিরোধীরা সর্বদল বৈঠকও ডেকেছি। কিন্তু আগে রাজ্য সভায় প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতি প্রয়োজন।’
সরকারের কাছে বিরোধীদের দাবি, পেগাসাস নিয়ে অবস্থান খোলসা করুক কেন্দ্র। পেগাসাস সফটওয়্যার সরকার কিনেছিল কিনা, তা পার্লামেন্টে জানাক তারা। আর কিনলে কোন এজেন্সি থেকে কিনেছিল, কাদের ফোন হ্যাক করা হয়েছিল, সেই সমস্ত তথ্যই স্পষ্ট করুক সরকার। এই পরিস্থিতিতে লোকসভার অচলাবস্থা কাটাতে এমপিদের নিয়ে বৈঠক করেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা।
সেখানে তিনি বিরোধীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অনেকেই পার্লামেন্টের নিয়মানুবর্তিতা মানছেন না। এমন চলতে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিন লোকসভার বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠকে সুষ্ঠুভাবে অধিবেশন চালানোর অনুরোধ করেন।
কিন্তু পেগাসাস ইস্যুতে আলোচনা না হলে অধিবেশন চলতে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে সহমতে পৌঁছাতে পারেনি সরকার এবং বিরোধী পক্ষ। বৈঠকে সমাধান সূত্র অধরাই থাকল।
বস্তুত তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন। একের পর এক বিরোধী নেতার সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টে পেগাসাস ইস্যুতে নাছোড় মনোভাব নিয়েছে তৃণমূল। এক্ষেত্রে কংগ্রেসের মনোভাবও একই।
বুধবারই রাহুল গান্ধী বিরোধী দলের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই কথা বলেছিলেন। পেগাসাস ইস্যুতে সরকারের তরফ থেকে বক্তব্য না রাখা হলে লোকসভায় অচলাবস্থা না কাটারই আশঙ্কাই প্রবল।