করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখে দেয়ার শক্তশালী হাতিয়ার মাস্ক হলেও এখনও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বড় একটা অংশের মানুষকে মাস্ক পরানোর অভ্যাস করানো যায়নি। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের করা এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে নাজেহাল রাজ্য। সামনে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা। বিশেষজ্ঞদের মতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সামাল দিতে মাস্কের বিকল্প নেই। করোনা টিকার নেয়া থাকলেও মাস্ক পরা অত্যন্ত জরুরি। রাজ্য সরকার, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ ব্যাপারে ধারাবাহিক জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও একশ্রেণির মানুষের মধ্যে করোনা বিধিনিষেধ না মেনে, মাস্ক না পরে ঘুরে বেড়ানো দস্তুর হয়ে গেছে।
আর এরাই ডেকে আনছেন করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিপদ।
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের করা এক সমীক্ষায় ৪৯ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন না বলে জানা গেছে। তাই করোনা বিধিনিষেধ মানার জন্য রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে।
রাজ্যের সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫১ দশমিক ৬২ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরছেন।
অর্থাৎ প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন না। শুধু তাই নয় ওই সমীক্ষায় ধরা পড়েছে যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন তাদের ৩৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ মানুষ সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করছেন না।
পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার ৬৫০টি জায়গায় সাধারণ মানুষের মাস্ক ব্যবহার নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। কলকাতা ও হাওড়ার ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকায় মাস্ক ব্যবহারের উদাসীনতা রয়েছে বলে সমীক্ষকরা জানতে পেরেছেন।
আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান রাজ্যের কোভিড প্রোটোকল মনিটরিং কমিটির সদস্য জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘সবার আগে নিজের ভালো নিজেকে বুঝতে হবে। প্রতিটি মানুষের পেছনে একজনকে করে পুলিশ দিয়ে তো মাস্ক পরাতে বাধ্য করা যায় না। মাস্কের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাজ্যজুড়ে সরকার থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রচার চালিয়েছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপদ সবাই দেখছে।’
করোনা বিধিনিষেধে ছাড় দিলেও রাজ্য সরকার বিধিনিষেধ তুলে নেয়নি। অথচ এর মধ্যে বিধিনিষেধ ভেঙে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন শহরে হোটেল, বার, বাজার খোলা থাকছে।
মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী মাস্ক পরার জন্য নজরদারি বাড়াতে জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ না মানলে শাস্তির ব্যবস্থা করতে বলেছেন। শুধু মাস্ক পরা নয়, সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন কিনা তা দেখতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বুধবারের রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮১৫ জন। কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ জন। এর মধ্যে শুধু উত্তর চব্বিশ পরগনায় রয়েছেন ১১৪ জন। জেলার করোনা সংক্রমণ উদ্বেগ বাড়িয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ৭৭৩ জন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন বলে রাজ্যের স্বাস্থ্য বুলেটিন উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবারের বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।