দুই বছর আগে ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাস হয়েছিল ভারতের পার্লামেন্টে। যে কোনও আইন পাস হওয়ার পর ছ’মাসের মধ্যে বিধি তৈরি হয়ে যায়৷
কিন্তু সিএএ আইন প্রণয়নের পর সেই সময়সীমা অনেক দিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু এখনও এই আইনের প্রয়োজনীয় বিধি তৈরি হয়নি।
ফলে এখনই কার্যকর হচ্ছে না সিএএ। বিধি তৈরিতে আগামী বছরের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছে কেন্দ্র। কবে সিএএর নিয়ম-নীতি প্রকাশ করা হবে? কংগ্রেস এমপি গৌরব গগৈয়ের এই প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার লোকসভায় একথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। তবে কেন এখনও এই আইনের বিধি থমকে গেল তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে কিছু বলা হয়নি।
লোকসভা এবং রাজ্যসভার সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে এই সময়সীমা বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে আবেদন করা হয়েছে৷
পার্লামেন্টের রীতি অনুসারে, যে কোনও আইনের বিধি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর করতে হয়। তা না হলে আরও সময় চেয়ে নেয়ার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
সিএএর বিরুদ্ধে দিল্লিসহ ভারতের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ ও আন্দোলন হয়েছে। ফাইল ছবি
ইতিমধ্যেই লোকসভা এবং রাজ্যসভার সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে সিএএ কার্যকর করার জন্য একাধিকবার সময় সীমা বাড়ানোর আবেদন করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ আবারও সেই আবেদন করা হল। কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা যদিও এ ভাবে নতুন প্রণয়ন হওয়া আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি দিয়েছেন৷ সেই চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, আইন প্রণয়নের দু’মাসের মধ্যে তার জন্য প্রয়োজনীয় বিধি তৈরি করে ফেলা উচিত।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন মোতাবেক, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা (হিন্দু, খ্রিষ্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্শি) ভারতে এসে আশ্রয় নিলে তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন৷ এই আবেদনের জন্য আবেদনকারীর নিজের ও তার বাবা-মায়ের জন্মের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। তা না থাকলে ভারতে ছ’বছর বসবাসের পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে।
সিএএ দ্রুত কার্যকর করার জন্য কেন্দ্রের ওপর চাপ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের সময় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা বারে বারে এই আইন তাড়াতাড়ি কার্যকর করার দাবি তুলেছিলেন। ভোট প্রচারে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন যে, অতিমারি নিয়ন্ত্রণে এলেই সিএএ বিধি তৈরির কাজ শেষ হবে। তারপরই আইন কার্যকর হবে।
অন্যদিকে, সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিশানা করে নয়া নাগরিকত্ব আইন ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সিএএর বিরুদ্ধে দিল্লিসহ দেশের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ ও আন্দোলন হয়েছে। পুলিশের গুলি ও দমন-পীড়নে প্রায় শতাধিক বিক্ষোভকারীর প্রাণ গিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।