প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচিকে বরখাস্তের পরদিনই ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে কারফিউ ঘোষণা করেছেন তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তিউনিসিয়ায় এক মাস কারফিউ জারি থাকবে বলে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সোমবার রাতে প্রেসিডেন্টের ঘোষণায় বলা হয়, কারফিউ চলাকালে তিনজনের বেশি মানুষ একসঙ্গে জনপরিসরে থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজন বা চিকিৎসাসেবা ছাড়া ঘরের বাইরে বেরোনো নিষেধ।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় অব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রী মেচিচিকে বরখাস্ত করেন তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট সাইদ।
এ ছাড়া তিউনিসিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিচারমন্ত্রীকেও বরখাস্ত করেন তিনি। পাশাপাশি এক মাসের জন্য পার্লামেন্ট স্থগিত করেন সাইদ।
বিরোধীরা সহিংস আচরণ করলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে সতর্ক করেন প্রেসিডেন্ট।
তবে প্রেসিডেন্ট সাইদের এসব পদক্ষেপকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে ইসলামপন্থি দলসহ তিউনিসিয়ার বিরোধী দলগুলো।
তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘বিপ্লব ও সংবিধানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের’ অভিযোগ আনে দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার রাচেদ ঘানুচি।
ক্ষমতাসীন দল ইন্নাহদার নেতা ঘানুচি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘দেশের পার্লামেন্ট এখনও কার্যকর বলে আমরা মনে করছি। পার্টির সমর্থক ও তিউনিসিয়ার জনগণ যেকোনো মূল্যে দেশের বিপ্লব রক্ষা করবে।’
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী মেচিচি সোমবার জানান, প্রেসিডেন্ট মনোনীত ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন তিনি।
ফেসবুকে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘তিউনিসিয়াবাসীর নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে রাষ্ট্রের কোনো পদ বা দায়িত্ব গ্রহণ না করার ঘোষণা দিচ্ছি।’
এদিকে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট সাইদের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানান, আলাপে তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মূলনীতি সমুন্নত রাখার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সাইদকে পরামর্শ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন।
তিউনিসিয়ার সব রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখতে সাইদের প্রতি আহ্বানও জানান ব্লিঙ্কেন।
১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ তিউনিসিয়ায় করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসসহ অন্য শহরে ক্ষমতাসীন দল ইন্নাহদার বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে আসছিলেন। তারা পার্লামেন্ট বিলুপ্তেরও আহ্বান জানান।
রোববার বিক্ষোভ চলাকালে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে তিউনিসিয়ার ২০১১ সালের বিপ্লবে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল তিউনিসের অ্যাভিনিউ বুরগিবারসহ আশপাশের সড়ক বন্ধ করে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী।
তিউনিসিয়ার বেশ কয়েকটি শহরে সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। ওই সময় গ্রেপ্তার হন অনেকে।
ইন্নাহদার কার্যালয়ও ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা।
১০ বছর আগে তিউনিসিয়ায় বিপ্লবের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সূচনা হয়। পুরো অঞ্চলে ‘আরব বসন্ত’ ছড়িয়ে পড়ার পেছনে উত্তর আফ্রিকার দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
তবে বিপ্লবের মাধ্যমে তিউনিসিয়ায় কর্মসংস্থান ও সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টিতে জনগণের আশা দ্রুতই ধূলিসাৎ হয়।
এক দশক ধরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তিউনিসিয়া।
সম্প্রতি করোনার প্রাদুর্ভাব দেশটির পরিস্থিতি আরও বিপর্যস্ত করে তোলে।