ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ জনে। দক্ষিণের কর্ণাটক রাজ্যে প্রাণ গেছে আরও নয়জনের।
ভূমিধস হওয়া এলাকাগুলোতে কাদামাটি আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়া মানুষকে উদ্ধারে ব্যস্ত সময় পার করছে বিপুলসংখ্যক উদ্ধারকর্মী। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘর থেকেও দুর্গতদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়, বেশ কয়েকটি রাজ্যেই চলতি মৌসুমের বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি, রায়গড় ও সাতারা জেলায় কয়েকটি ভূমিধস হয়েছে।
এর আগে আবহাওয়াবিদদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, চার দশকের মধ্যে এ বছর জুলাইয়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টি দেখছে মহারাষ্ট্র। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ফুলেফেঁপে উঠেছে বড় বড় নদীগুলো, দুর্ভোগে উপকূলবর্তী লাখো মানুষ। ছয় জেলায় জারি আছে রেড অ্যালার্ট।
মুম্বাইয়ের ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে তালিয়েতে এ পর্যন্ত ভূমিধসে মারা যাওয়া ৪২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৩৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আরও প্রায় ৪০ জন ধ্বংসস্তূপে আটকে আছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। ভূমিধসে গ্রামটির বেশিরভাগ বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
বিবৃতিতে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার জানিয়েছে, বন্যাদুর্গত এলাকাগুলো থেকে প্রায় ৯০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। আরও চারটি এলাকায় ভূমিধসে নিখোঁজদের সন্ধানে অভিযান চলছে।
ভারতের পশ্চিম উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় ৫৯৪ মিলিমিটার (২৩ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। হিল স্টেশন মহাবলেশ্বরে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সর্বোচ্চ ৬০ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বেশ কয়েকটি বাঁধ থেকে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিতে শুরু করেছে প্রশাসন। ঢলের আশঙ্কায় এলাকা ছাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় মুম্বাইয়ের সঙ্গে দক্ষিণের শহর বেঙ্গালুরুর সংযোগ মহাসড়কে যান চলাচল ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বন্ধ। আটকা পড়েছে কয়েক হাজার ট্রাক।
বন্যায় প্রাণহানির খবরে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে শুক্রবার তিনি জানান, মহারাষ্ট্রের আবহাওয়া পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দুর্গতদের সহায়তারও আশ্বাস দেন তিনি।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কর্ণাটকে উত্তরাখণ্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যা ও ভূমিধসে গৃহহীন হয়েছে ৩১ হাজারের বেশি মানুষ। ২৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে সাড়ে ২২ হাজার মানুষের।
বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৬০০ বাড়িঘর। নষ্ট হয়েছে প্রায় ৬১ হাজার হেক্টর আবাদি জমি।
প্রতিবেশী তেলেঙ্গানায় প্রাদেশিক রাজধানী হায়দরাবাদ ও অন্যান্য নিম্নাঞ্চলে অতি বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা আর অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে আরও বড় বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা।
ভারতের পশ্চিম উপকূলের পার্বত্য এলাকার প্রসঙ্গ টেনে টুইটারে পরিবেশবিষয়ক অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র শর্মা লিখেন, ‘মহাবলেশ্বরে বৃষ্টির যে তাণ্ডব আমরা দেখেছি…তা পরিবেশগতভাবে দুর্বল অঞ্চলটিতে চলমান ভাঙাগড়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী একটি সতর্কবার্তা।’
আরও কয়েকদিন এমন আবহাওয়া থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
গত দুই সপ্তাহে বিরূপ আবহাওয়ার সাক্ষী হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল। ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চল আর চীনে বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দাবদাহ ও দাবানলে বিপর্যস্ত উত্তর আমেরিকা।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবেই এমন পরিস্থিতি বলে শঙ্কা জোরালো হচ্ছে।