বিদেশি ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধক্ষেত্র আফগানিস্তান ছেড়েছে বেশিরভাগ বিদেশি সেনা। এর মধ্যেই চলতি সপ্তাহে তালেবানের বিভিন্ন ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
তালেবানের বিরুদ্ধে আফগান সরকারকে অব্যাহত সমর্থন ও শক্তি প্রদর্শনে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার এসব হামলা চালানো হয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, হামলার মাধ্যমে আফগানিস্তান দখলে তালেবানের অগ্রগতি ঠেকানোর বিষয়ে নিজেদের মনোভাব জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ বিষয়ে দেশটি কতটা দৃঢ়, তা স্পষ্ট নয়।
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারে কমপক্ষে এক দফা হামলা হয়েছে। এতে অঞ্চলটি দখলে তালেবানের তৎপরতার গতি কমেছে।
হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হওয়া গত বছরের শান্তিচুক্তির লঙ্ঘন আখ্যা দিয়েছে তালেবান। ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করছে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জোট।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় ‘মাশুল গুনতে হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তালেবান। ধারণা করা হচ্ছে, বিমান হামলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেই এমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে গোষ্ঠীটি।
কান্দাহার আর হেলমান্দ প্রদেশে বিমান হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে তালেবান।
বর্তমানে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাঁটি নেই। আফগান ভূখণ্ডে তালেবানের বিরুদ্ধে সবশেষ হামলায় পারস্য উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি ও বিমানবাহী রণতরী রোনাল্ড রিগ্যানে মোতায়েন করা বিমান ব্যবহার হয়েছে।
কান্দাহার ও আশপাশের এলাকায় তালেবানের বিরুদ্ধে আগামী কিছুদিনে আরও বিমান হামলা চালানো হবে বলে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।
পশতুন আদিবাসী অধ্যুষিত কান্দাহার থেকেই ১৯৯০-এর দশকে উত্থান শুরু তালেবানের। সে সময় দ্রুতই দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল তারা।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জোটের সেনা অভিযানে উৎখাত হওয়ার পর সম্প্রতি আবারও কান্দাহার প্রদেশের রাজধানী কান্দাহার শহর দখল করে তারা। আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর এটি।
কান্দাহার শহরসহ চলতি বছরের মে মাস থেকে আফগানিস্তানের ৪১৯টির জেলার মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রায় বিনা বাধায় দখল করেছে তালেবান। বর্তমানে রাজধানী কাবুলসহ ৩৪টি প্রদেশের রাজধানীর দখল নেয়ার চেষ্টা করছে গোষ্ঠীটি। এমন বাস্তবতায় আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালাল যুক্তরাষ্ট্র।
এমএসএনবিসিকে শুক্রবার দেয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘তালেবানের কার্যকলাপ নিয়ে আমাদের যথেষ্ট উদ্বেগ আছে। কারণ তারা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দেশ দখলের চেষ্টা করছে।’
এর আগে তালেবান আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পথে বলে সতর্ক করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ জেনারেল মার্ক এ মাইলি।
এ অবস্থায় আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে শান্তিচুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব। তবে যুদ্ধে জয় হতে চলেছে বলে বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে আলোচনায় অনীহা প্রকাশ করেছে তালেবান।