পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক কী, সেটি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ঘটনার শুরু বৃহস্পতিবার। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে একটা ইতিহাস হয়েছে। যেটা একটু বলতে ইচ্ছে করছে। এককভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন এক মুসলিম কন্যা। মুর্শিদাবাদ জেলার এক মুসলিম গার্ল। তিনি ৫০০ মধ্যে এককভাবে ৪৯৯ সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন।’
সভাপতির কাছে শিক্ষার্থীর নাম জানতে চাইলে তিনি ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখে নিতে বলেন। ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ওই ছাত্রীর নাম রুমানা সুলতানা। মেধাতালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে বারবার শিক্ষার্থীর ধর্ম-পরিচয় টেনে আনার যুক্তি আর পাল্টা যুক্তিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় বঙ্গসমাজ ও বঙ্গরাজনীতি।
শুক্রবার বিজেপির আইটি সেলের প্রধান পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণ রাজনীতির অভিযোগ তোলেন।
তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় রাজনীতি নতুন মাত্রা পেল, যখন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মেধাতালিকায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ছাত্রীর নাম বলার আগে ধর্ম-পরিচয় উল্লেখ করেন। একবার নয়, বারবার সে কথা উল্লেখ করেন তিনি। ছাত্রীর মেধার থেকে ধর্ম বড় হলো? এসব আর কতদিন ছাত্রছাত্রীদের সহ্য করতে হবে?’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চড়া ভাষায় লিখেছেন, ‘মুসলিম মেয়ে প্রথম হয়েছে বলে যারা বারবার বলছেন, তাদের এত অবাক কেন হতে হচ্ছে! মুসলিম মেয়ে বলে কী কোনো অঘটন ঘটেছে! মেধা, বুদ্ধি, পরিশ্রম করে প্রথম হতে হয়। কাউন্সিলের প্রেসে শ্রুতিকটু শুনতে লাগে যখন বলা হয়, প্রথম হয়েছে মুসলমান মেয়ে! ছাত্রীর নাম দেখে, সে কোন ধর্মের বোঝানোর দায়িত্ব না নিলে খুশি হব। একজন ছাত্রী ফার্স্ট, ছেলেদের থেকে এগিয়ে চলেছে মেয়েরা, এটা লক্ষণীয়।’
রাজ্যের ইমাম অ্যাসোসিয়েশন ও সংসদ সভাপতি মহুয়া দাসের মন্তব্যের বিরোধিতা করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন।
মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির রাজা মনীন্দ্র চন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমানা সুলতানা এবং তার পরিবার অবশ্য এই সাফল্য নিয়ে অহেতুক বিতর্ক চায় না। রুমানার বাবা রবিউল আলম পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক এবং মা সুলতানা পারভীনও একজন স্কুলশিক্ষক। মেয়ের এই সাফল্যে তারা ভীষণ খুশি।
রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিম কন্যা প্রসঙ্গে বলেন, ‘অপ্রিয় হলেও সত্য। অত্যন্ত আনন্দের খবর যে রুমানা সুলতানা প্রথম হয়েছেন। মুসলিম কন্যা বলে যে শব্দটি রয়েছে, তার মধ্যে অসাম্য লুকিয়ে রয়েছে। কিন্তু তাও বলব, যখন ছেলেমেয়ে বলে গোনাগুনতি হয় তখন মুসলিম কন্যার উল্লেখ যুক্তিসংগতই।’
কবি মন্দাক্রান্তা সেন বলেন, ‘যারা মুসলিম ধর্মাবলম্বী তাদের সব সময় আলাদা করা হচ্ছে। বিজেপি সরকারকে ধর্ম নিয়ে দোষারোপ করা হয়। কিন্তু এই সরকার তো অন্য কোনো কাজ করছে না। ভট্টাচার্য্য বন্দ্যোপাধ্যায় যদি এই ফল করত, তাকে কি হিন্দু কন্যা বলে উল্লেখ করা হতো? এই বিভাজন সৃষ্টি হবে কেন?’