পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিতর্কের শুরু থেকেই ভারতের সরকার এবং প্রধান শাসক দল বিজেপি নজরদারির বিষয়টি ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করছে। একই সঙ্গে এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ‘কালিমালিপ্ত’ করার ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করছে দলটি।
বৃহস্পতিবার সরকারের মন্ত্রী এবং বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষী লেখি আরও এক পা এগিয়ে বিশ্বব্যাপী পেগাসাস প্রকল্পের মিডিয়া তদন্তকে ‘জাল সংবাদ’ এবং ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ বলে নিন্দা করেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, নজরদারি করা হয়েছে বলে যে ফোন নম্বরের তালিকা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশ করেছে সেটি ইসরায়েলের সংস্থা এনএসও গ্রুপের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ছিল না।
মীনাক্ষী লেখির ওই ওই মন্তব্য সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বৃহস্পতিবার রাতেই এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্পষ্টতই পেগাসাস প্রকল্পের তদন্তে পাওয়া তথ্যকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছে এবং তালিকায় থাকা নম্বরের তথ্য অবশ্যই এনএসও গ্রুপের পেগাসাস স্পাইওয়্যারের নিশানায় ছিল।’
সংস্থাটি আরও বলছে, ‘সোস্যাল মিডিয়ায় যে মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে সেটি উন্মোচিত হওয়া পেগাসাস কাণ্ড নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।’
অন্যদিকে, পেগাসাস বিতর্কে এদিন প্রধানমন্ত্রীকে কড়া আক্রমণ শানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। নরেন্দ্র মোদিকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলে তোপ দাগেন তিনি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেরর ইস্তফাও দাবি করেন কংগ্রেস সাংসদ। পেগাসাস নজরদারির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে সত্য উদঘাটনে পেগাসাসকাণ্ডে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন রাহুল গান্ধী।
সংসদ ভবনের বাইরে শুক্রবার রাহুল গান্ধী বলেন, ‘ইসরাইল সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসাবে পেগাসাস স্পাইওয়্যার হিসাবে ব্যবহার করে। আর প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই হাতিয়ার ভারতীয় গণতন্ত্র ও দেশের সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করছেন। রাজনৈতিকভাবেও এই হাতিয়ারের ব্যবহার হয়েছে কর্নাটকে। এসবের জন্য একটিই শব্দ প্রয়োগ করা যায়। সেটি হলো রাষ্ট্রদ্রোহী।’
এনএসও গ্রুপের পেগাসাস স্পাইওয়্যারের সরকারি গ্রাহকদের নজরদারির সম্ভাব্য নিশানায় থাকা লক্ষ্যগুলোর তালিকা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ফ্রান্সের অলাভজনক সংস্থা ‘ফরবিডেন স্টোরিজ’এর যৌথ অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের দি গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটনের দি ওয়াশিংটন পোস্ট, ফ্রান্সের লে মন্ডে, ভারতে দি ওয়্যারসহ বিশ্বের ১৭টি প্রথম সারির পত্রিকা ও ওয়েবসাইট।
রোববার থেকে এই সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’ প্রতিবেদনের অংশ দফায় দফায় প্রকাশ করছে। প্রতিদিনই উঠে আসছে নজরদারির নিশানায় থাকা নতুন নতুন নাম।
মীনাক্ষী লেখি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘প্রকাশিত প্রতিবেদনটি কোনো ডিরেক্টরিতে পাওয়া টেলিফোন নম্বরের তালিকার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। দ্বিতীয়ত, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তালিকার কথা অস্বীকার করেছে। পেগাসাস প্রস্তুতকারী সংস্থা এনএসও বলেছে যে তাদের গ্রাহকদের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে মিলছে না আলোচ্য তালিকা।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মীনাক্ষীর বক্তব্য খণ্ডন বলছে, বিভ্রান্তি তৈরির জন্যই এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।